রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১০ পূর্বাহ্ন

অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অগ্রভাগে ছিলেন শহীদ শাকিল

রিপোটারের নাম / ১০২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মাহমুদুল হাসান আশিক
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ২৭

২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে রাজধানীর উত্তরায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ হন সাংবাদিক মো. শাকিল হোসেন পারভেজ। দেশকে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে রক্ষা এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু করতে চাইতেন শাকিল।

সে স্বপ্ন থেকেই স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়ন ও হামলা-মামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন। এ কারণে দেশের বিগত সব অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রভাগের সৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন শহীদ শাকিল।

২০১৮ সালে ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন’ সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন শাকিল। তখন থেকেই আওয়ামী সন্ত্রাসীদের টার্গেটে পরিণত হন তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার (টঙ্গী ক্যাম্পাস) সাবেক এই শিক্ষার্থী। সেই আন্দোলনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা শাকিলের পেটে ছুরিকাঘাত করে হত্যাচেষ্টা চালায়।

২০২০ সালেও ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। ২০২২ সালে টঙ্গী কলেজ গেট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ফাহিম নামে একজনের নিহতের ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা ও নিরাপদ সড়কের দাবিতেও আন্দোলন গড়ে তোলেন শাকিল। এছাড়া বিভিন্ন সময় যৌক্তিক দাবি আদায়ের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

শাকিল ছাত্রশিবিরের সাথি ছিলেন বলে জানান তার বাবা মো. বেলায়েত হোসেন। তিনি নিজেও গাজীপুর সিটির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতে ইসলামীর নেতা। বাবা বেলায়েত হোসেন জানান, জুলাই বিপ্লবের শুরু থেকেই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হন শাকিল। তবে তিনি থেমে থাকেননি।

২০২৪-এর জুলাইয়ে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের আন্দোলন জোরদার করতে শাকিল তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উৎসাহিত করেন। ১৬ জুলাই সহপাঠীদের সঙ্গে প্রথমে বিরুলিয়া ব্রিজ সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এবং পরে উত্তরা বিএনএস সেন্টারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশ নেন। আন্দোলনের পাশাপাশি পেশাগত দায়িত্বও পালন করছিলেন সাংবাদিক শাকিল।

এ সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। সেদিন টঙ্গী স্টেশন রোডে তা’মীরুল মিল্লাত ও টঙ্গী কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে উত্তরা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে ফিরছিলেন। এ সময় শাকিল শিক্ষার্থীদের থামিয়ে তাদের একসঙ্গে যাওয়ার পরামর্শ দেন বলে জানান বন্ধু রাকিব হোসাইন বাপ্পী।

১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি সফল করতে মানারাত ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে উত্তরা বিএনএস সেন্টারে আন্দোলনে যোগ দেন শাকিল। এ সময় হামলা শুরু করে পুলিশ, র‌্যাব ও আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। ফলে উত্তরা বিএনএস সেন্টার ও আজমপুরসহ আশপাশের সড়ক-মহাসড়কগুলো পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।

এ সময় সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস, ছররা গুলি, রাবার বুলেটের পাশাপাশি মরণঘাতী গুলিও ছোড়া হয় আন্দোলনকারীদের ওপর। এছাড়া থানা ও এর আশপাশের ভবনের ছাদ থেকে সন্ত্রাসীরা স্নাইপার দিয়ে টার্গেট করে নেতৃস্থানীয়দের গুলি করে মারছিল। এরই মাঝে শাকিলদের সঙ্গে থাকা হাসিবুল ইসলাম ছররা গুলিতে আহত হলে তাকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেলে নেওয়া হয়।

সেখানেই গুলিবিদ্ধ হাসিবকে দেখতে যান শাকিল। মেডিকেল থেকে কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে আবারও আন্দোলনে যুক্ত হন শাকিল ও তার বন্ধুরা। এ সময় ছররা গুলি লেগে রক্তাক্ত হন শাকিলরা। দুই বন্ধু এক পাশে গিয়ে আশ্রয় নিলেও কপালে ছররা গুলির আঘাতে বের হওয়া রক্তও শাকিলের মনে ভয় ধরাতে পারেনি।

তবে এর কিছুক্ষণ পরই সড়কের এক পাশে থাকা বাপ্পী দেখেন গুলিবিদ্ধ শাকিলকে কয়েকজন আন্দোলনকারী নিয়ে যাচ্ছেন। ২-৩টি হাসপাতাল ঘুরিয়ে শাকিলকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে চিকিৎসক জানান, গুলি বুকে লাগায় ঘটনাস্থলেই শাহাদাতবরণ করেন শাকিল।

১৮ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে মানারাত ইউনিভার্সিটিতে শহীদ শাকিলের প্রথম জানাজা হয়। সবশেষে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদরের কাপিলাতলিতে পঞ্চম জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে শহীদ শাকিলকে দাফন করা হয়।

এদিকে শাকিল হত্যাকাণ্ডে তার বাবা বাদী হয়ে ৭১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৩০-৩৫ পুলিশ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ দেন।

সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে বাবা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘যারা এই দেশকে শোষণ করেছে, রক্তের নদী বইয়ে দিয়েছে, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছেÑ সেই শেখ পরিবারের কাউকেই আজ পর্যন্ত আটক করা হলো না। এ জন্যই কী আমাদের সন্তানরা জীবন দিয়েছে!’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ