৩৪তম বিসিএসে কোটা বৈষম্যের জন্য ৬৭২টি পদ শূন্য রেখেই চূড়ান্ত ফলাফল দেয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এতে উত্তীর্ণ হয়েও ক্যাডারবঞ্চিত হন ১৫৭ মেধাবী প্রার্থী। ক্যাডার পেতে নানা আন্দোলন সংগ্রাম করেও কোনো ফল পাননি তারা।
সর্বশেষ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নতুন আশায় তৎপর হন বঞ্চিতরা। বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে কোনো সাড়া না পেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন প্রার্থীরা। এ বিষয়টি ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য পিএসসিকে নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। বিষয়টি নিয়ে পিএসসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন। তবে এখনো এটির কোনো সমাধান হয়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৪ মে ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আর বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে নিয়োগ হয় ২০১৬ সালের জুনে। তবে এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি ফলাফলে কোটা প্রয়োগ করায় কোটাবিরোধী তীব্র আন্দোলনের চাপে পুনরায় ফল প্রকাশ করতে বাধ্য হয় তৎকালীন পিএসসি। এতে তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়ে ৬৭২টি ক্যাডার পদ। এসব পদের বিপরীতে পর্যাপ্ত প্রার্থী উত্তীর্ণ হলেও বিগত সরকারের চাপে পদগুলো শূন্য রেখে চূড়ান্ত ফলাফল দেয় পিএসসি।
এই বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আবার তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার ও শূন্য পদগুলো ৩৫তম বিসিএসের মেধা থেকে পূরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে ওইসব পদের বিপরীতে পরীক্ষাই দেয়নি ৩৫তম বিসিএসের প্রার্থীরা।
জাহিদুল ইসলাম নামের একজন বঞ্চিত প্রার্থী জানান, চব্বিশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই বঞ্চনার সমাধানের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন করেও তারা কোনো সাড়া পাননি। একপর্যায়ে আদালতের শরণাপন্ন হন বিভিন্ন ক্যাডারের ১৫৭ জন প্রার্থী। ওই মামলার রুল ও রায় (পিটিশন নং ১৩৬৩৩/২০২৪) হয় গত বছরের ১৮ নভেম্বর। যেখানে আদালত পিএসসিকে আগামী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে ১৫৭ প্রার্থীর আবেদন নিষ্পত্তি করার আদেশ দেন।
তিনি জানান, ওই রায়ের বিপক্ষে সরকারপক্ষ লিভ টু আপিল (পিটিশন নং ৪১৫৩/২০২৪) দায়ের করলে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর তা চেম্বার আদালতে আউট হয়ে যায়। আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বর্তমান পিএসসি এখন পর্যন্ত ১৫৭ বঞ্চিত প্রার্থীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানায়নি। প্রার্থীরা দিনের পর দিন পিএসসির কাছে ধরনা দিয়েও কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। বিগত সরকারের আমলে এবং বর্তমান সরকারের আমলেও পিএসসির একই রকম আচরণে বঞ্চিত প্রার্থীরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
সূত্রমতে, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগীদের পক্ষে ডা. মো. তফিজুল ইসলাম গত ২৪ নভেম্বর পিএসসি চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন। বিষয়টি নিয়ে তারা পিএসসি চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্য ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে সাক্ষাৎও করেন। তবে এখনো কোনো আশ্বাস পাননি তারা। এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশনার মেয়াদ ৪ মার্চ শেষ হবে। এ অবস্থায় চরম অনিশ্চয়তা ও হতাশার মধ্যে আছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উত্তীর্ণদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন চাকরিতে ঢুকে পড়েছেন। বর্তমানে ১৫৭ জন ক্যাডার পাওয়ার আশায় আছেন।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, উত্তীর্ণ বেশিরভাগ প্রার্থীই কোটা আন্দোলনকারী এবং ভিন্নমতাবলম্বী হওয়ায় চূড়ান্ত ফলাফলে কোটার ৬৭২টি পদ পূরণ করা হয়নি। ৩৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা যেন কোনোভাবেই এই পদগুলো না পায়, তাই সরকার ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে ৬৭২টি পদ ৩৫তম বিসিএস থেকে পূরণের আদেশ দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম গতকাল মঙ্গলবার আমার দেশকে বলেন, এটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। পিএসসির কিছু করার নেই। হাইকোর্টের আদেশ এবং ভুক্তভোগীদের আবেদনের বিষয়টি তার জানা আছে উল্লেখ করে পিএসসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, কোর্টের নির্দেশনার বিষয়ে আমরা একটি জবাব তৈরি করব।