দলের প্রবীণ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানকে প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিএনপি।
মঙ্গলবার বিকালে বাদ আসর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার কফিন আনা হয়। প্রথমে কফিনটি কালো কাপড়ে আচ্ছাদিত স্থানে কফিনটি রাখার পর মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতৃবৃন্দ বিএনপির পতাকা দিয়ে ঢেকে দেন।
পরে মহাসচিবের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ নেতৃবৃন্দ দলের পক্ষ থেকে কফিনে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান।
বিএনপির শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে পর্যায়ক্রমে ঢাকা মহানগর বিএনপি, শ্রমিক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দলের পক্ষ থেকেও পুস্পস্তবক অর্পন করা হয় মরহুমের কফিনে।
নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে প্রয়াত নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক উপস্থিত হয়।
এর আগে নয়া পল্টনের সড়কে মরহুমের তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, জহির উদ্দিন স্বপন, এম এ হালিম, শাহজাদা মিয়া, আরিফুল হক চৌধুরী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, মাহবুবে রহমান শামীম, মীর হেলাল, ইশরাক হোসেন, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টির(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, ভাসানী অনুসারি পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাগপার আসাদুর রহমান আসাদসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান ভোর ৬টায় নিজের ধানমন্ডির বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত স্কয়ার হাসপাতালে নেবার পরে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
৮০ বছর বয়সী নোমান দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন তিনি।
নয়া পল্টনে জানাজার আগে বেলা আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সাবেক সাংসদ আবদুল্লাহ আল নোমানের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে তার প্রথম নামাজে জানাজা ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম- ৯ আসন এবং ২০০১ সালে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নোমান।
খালেদা জিয়ার দুই সরকারের আমলে মৎস্য ও পশু সম্পদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান, বন ও পরিবেশ এবং খাদ্য মন্ত্রণায়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব তিনি পালন করেন।
নয়া পল্টনে জানাজার আগে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় নেতা, আমাদের প্রিয় নেতা বিশেষ করে বীর চট্টলার মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয়, বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রিয় নেতা, আমাদের নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান আমাদের মাঝ থেকে আজকে সকাল ৬টায় চলে গেছেন। তিনি মৃত্যুর আগে চট্টগ্রামে আজকে যে সমাবেশ(বিএনপির সমাবেশ) হওয়ার কথা ছিলো সেই সমাবেশে যাওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অর্থাৎ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি দল ও পার্টির কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।”
‘‘ আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা যিনি একাত্তর সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন, ছাত্র জীবনে ছাত্রদের জন্য কাজ করেছিলেন পরবর্তীকালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তিনি দেশের পূনর্গঠনের কাজে নিয়োজিত হয়েছিলেন এবং বিএনপিকে একটি শক্তিশালী সংগঠনের পরিণত করছেন সেই নেতা আমাদের মাঝ থেকে চলে যাওয়াতে আমাদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো সেটা খুব সহজে পুরণ হবার নয়। তার চলে যাওয়া নিঃসন্দেহে আমাদের জন্যে অত্যন্ত শোকাবহ।”
তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, ‘‘ আমি বিএনপির পক্ষ থেকে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তার প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি। আল্লাহ তালা তাকে যেন বেহস্ত নসিব করেন।”
অনুষ্ঠানে প্রয়াত নেতার ছেলে সাঈদ আল নোমান তার বাবার আত্মার প্রশান্তি চেয়ে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে দোয়া চান।
জানাজার আগে জাতীয় পার্টির(কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার কন্যা বুধবার দেশে ফিরলে শুক্রবার চট্টগ্রামে রাউজানের নিজের গ্রামের বাড়ি গহিরায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।