আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। তারা রাষ্ট্রের মেরামত চেয়েছে। তারা শুধু শাসকের পরিবর্তন নয়, শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চেয়েছে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ছিল তাদের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস: ডেভিল হান্ট, সেন্ট্রাল কমান্ড ও নাগরিক প্রত্যাশার হিসাবনিকাশ’ নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জনগণ চূড়ান্তভাবে বিরক্ত হওয়ার আগেই নিজেদের দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের গত ছয় মাস ছিল নানা প্রতিকূলতাময়। ১৮০ দিনে ১৫০টির মতো আন্দোলন ও অবরোধ গণতান্ত্রিকভাবে তারা মোকাবিলা করেছে। ভারতের ষড়যন্ত্রে সৃষ্ট বন্যা ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত বাঁধানোর ঝুঁকি, ব্যাপক নিয়োগ-বদলি, প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চিতদের পদোন্নতি ও পদায়ন, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্প বাতিল, হাজার হাজার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারদের মুক্তি, দেউলিয়া হওয়া আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো সর্বোপরি ফ্যাসিবাদের রেখে যাওয়া অনিয়ম ও লুটপাটের ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে ঘুরে দাঁড় করানোর বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল তাদের কাঁধে। ছয় মাসে এসব কাজের বিরাট ধকল গেছে এ সরকারের ওপর; সেজন্য তাদের অশেষ ধন্যবাদ ও দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাদের প্রতি আবারও আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। কিন্তু কথা হলো সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা কী শুধু এসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? নিশ্চয়ই তা নয়।
সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষশক্তিগুলোর অনৈক্যে হতাশা প্রকাশ করে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানকে প্রথম দিনই বলেছিলাম আপনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য একটি টিম গঠন করুন কিন্তু একজন উপদেষ্টার অনীহার কারণে তিনি সেটা করেননি। যে দলগুলো জুলাই-আগস্টে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেছে তারা আজ একে অপরকে হেয় করে কথা বলছে। অযথা বাক্ যুদ্ধে জড়িয়ে তারা বিভেদ বাড়াচ্ছে; এর দায় সরকার এড়াতে পারে না।
সম্প্রতি সরকারের নেওয়া ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’কে ‘ডিলেইড ডেভিল হান্ট ইনিশিয়েটিভ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অপারেশনের ফলে খুব বেশি ফল আসবে বলে মনে হচ্ছে না। সরকারের উচিত ছিল শুরুতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া। প্রথমদিকে এ ব্যবস্থা নিলে বহু ডেভিল পালাতে পারত না আর চাঁদাবাজি ও দখলবাজি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা যেত।
সব বাহিনীর সমন্বয়ে সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার গঠনের বিষয়টিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, জনগণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ আছে, সেটা দেখতে চায়।
মঞ্জু পলাতক ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের উপর্যুপরি হুমকি-ধামকি-উসকানির বিষয়ে কতিপয় রাজনৈতিক দলের সুবিধাবাদী অবস্থানের সমালোচনা করে বলেন, কোনো কোনো নেতার দায়সারা গোছের বক্তব্য আমাদের খারাপ লেগেছে। তারা একদিকে সুশীল অবস্থান নিচ্ছেন অন্যদিকে তাদের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণেই ভাঙচুরসহ বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি বলেন, গুম, খুন ও গণহত্যাকারীদের যেকোনো তৎপরতার ব্যাপারে নমনীয়তার কোনো সুযোগ নেই। বিচার ও ক্ষমা চাওয়ার আগে খুনিদের অন্য যেকোনো বক্তব্য ও কার্যক্রমের ব্যাপারে আমরা কড়া অবস্থানের পক্ষে, তবে সেটা অবশ্যই হতে হবে ন্যায়সংগত ও রাজনৈতিকভাবে বুদ্ধিদীপ্ত।
সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, এবিএম খালিদ হাসান, ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আমজাদ খান, নারী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফারাহ নাজ সাত্তার, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব আহমেদ বারকাজ নাসির, উত্তরের যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুর রব জামিল, নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক শাহজাহান ব্যাপারী, সহকারী প্রচার সম্পাদক রিপন মাহমুদ, সহকারী দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরণ চৌধুরী, সহকারী অর্থ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, যুবপার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব শাহিনুর আক্তার শীলা, আন্তর্জাতিক বিভাগের সদস্য জাহরা মহজাবিনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।