তিন বছর আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক কিশোরীকে গণধর্ষণ পর হত্যার দায়ে তিন যুবকের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমানের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন খোলামোড়া গ্রামের কামির উদ্দিনের ছেলে মো. সজিব, ফরিদপুরের ভাংগা উপজেলার খাঁকান্দা গ্রামের হাসমত আলীর ছেলে মো. রাকিব এবং শরীয়তপুরের পালং মডেল থানার মুসলিম মাতবরের ছেলে শাওন ওরফে ভ্যালকা শাওন।
এছাড়া, লাশ গুমের ঘটনায় তাদের প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে একবছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর এরশাদ আলম বলেন, গণধর্ষণ ও হত্যার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তিন যুবকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আসামিদের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করে অর্থদণ্ডের টাকা আদায় করে রাষ্ট্রীয় কোষাকারে জমা দেওয়ার জন্য ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আলী আকবর এবং মো. রিয়াজ নামে দুইজনকে খালাস দেয় ট্রাইব্যুনাল।
রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা তিন আসামি রিয়াজ, রাকিব এবং শাওনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রায় শেষে দণ্ডিত রাকিব এবং শাওনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে দণ্ডিত অপর আসামি সজিব পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১১ জুন সকালে জরুরি সেবা ৯৯৯ এ সংবাদ পেয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পশ্চিম বামনসুর জামে মসজিদের সামনের পুকুর থেকে অজ্ঞাত কিশোরীর ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় পুলিশ মামলা দায়ের করে। তদন্ত শুরুতে তার পরিচয় শনাক্ত করে ভিকটিমের বান্ধবি বৃষ্টি আক্তার। পরে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে সে জানায়, এটা তার বান্ধবী মারিয়ার লাশ। পরে পুলিশ শাওনকে গ্রেপ্তার করে। শাওন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। তার দেয়া জবানবন্দিতে রাকিব, সজিব ও আলী আকবর মিলে ভিকটিম মারিয়াকে গণধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করার স্বীকারোক্তি দেয়। হত্যার পর মরদেহ পশ্চিম বামনসুর জামে মসজিদের পানিতে ফেলে রাখে তারা। এরপর পুলিশ রাকিব এবং সজিব গ্রেপ্তার করে। তারাও একই কথা বলে আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু হয়। মামলার বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষ ১৯ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন।