সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১৩ অপরাহ্ন

ক্যানসার চিকিৎসায় যুগান্তকারী আবিষ্কার

রিপোটারের নাম / ৭৫ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আরিফ বিন নজরুল
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৩৫

ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, ক্যানসার কোষকে ধ্বংস না করেও আবার সুস্থ কোষে রূপান্তর করা সম্ভব। এটি প্রচলিত ক্যানসার চিকিৎসার বিকল্প হতে পারে, যেখানে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির মাধ্যমে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা হয়, কিন্তু একইসঙ্গে সুস্থ কোষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (KAIST) বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা এমন একটি কৌশল খুঁজে পেয়েছেন, যা ক্যানসার কোষকে সুস্থ কোষে রূপান্তরিত করতে সক্ষম। মূলত ক্যানসার কোষের বিকাশের একটি বিশেষ পর্যায় রয়েছে, যেখানে সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে কোষগুলোকে আগের সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এই গবেষণা ক্যানসার চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

স্লোয়ান কেটারিং ক্যানসার সেন্টারের সাবেক অনকোলজিস্ট ডা. টিফানি ট্রোসো-স্যান্ডোভাল বলেন, ‘এই আবিষ্কার ক্যানসার চিকিৎসার জন্য এক নতুন পথ দেখাচ্ছে, যেখানে ক্যানসার কোষগুলোকে ধ্বংস না করে বরং আবার স্বাস্থ্যকর অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়।’ তিনি এই প্রক্রিয়াটিকে আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য, পানি ফুটানোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। ‘যখন পানি ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পৌঁছায়, তখন এটি এক মুহূর্তের জন্য তরল ও বাষ্পের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। ক্যানসার কোষের গঠন পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও একই রকম একটি সংক্ষিপ্ত সময় থাকে, যখন কোষগুলো পুরোপুরি ক্যানসারে রূপান্তরিত হওয়ার আগে এক ধরনের মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকে,’ তিনি ব্যাখ্যা করেন। গবেষণার সহ-লেখক ও দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কুয়াং-হিউন চো বলেন, ‘এই গবেষণায় আমরা প্রথমবারের মতো বিস্তারিতভাবে কোষের জেনেটিক নেটওয়ার্ক পর্যায়ে সেই পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি, যা ক্যানসারের বিকাশের রহস্য উন্মোচন করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা দেখিয়েছি, ক্যানসার কোষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র লুকিয়ে আছে এই সংক্ষিপ্ত রূপান্তর পর্বের মধ্যে।’

ক্যানসার হঠাৎ করেই তৈরি হয় না। এটি ধীরে ধীরে শরীরের কোষের ডিএনএ’তে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটিয়ে কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত করে। যখন এসব পরিবর্তন একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছে যায়, তখনই কোষ ক্যানসারে রূপান্তরিত হয়।

গবেষকরা এই পরিবর্তন প্রক্রিয়ার একটি সংকটময় পর্যায় শনাক্ত করেছেন, যখন কোষে একইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর ও ক্যানসার কোষের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে।

তারা একটি নির্দিষ্ট এনজাইম চিহ্নিত করেছেন, যা কিছু ক্যানসার-সম্পর্কিত প্রোটিনের ভাঙন বাধাগ্রস্ত করে এবং টিউমার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। গবেষকরা যখন এই এনজাইমকে ব্লক করেন, তখন ক্যানসার কোষগুলোর বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং তারা স্বাভাবিক কোষে পরিণত হয়। গবেষকরা ল্যাব-পরীক্ষায় কোলন ক্যানসারের কোষ থেকে তৈরি মিনিটিউমার বা ‘অরগানোয়েড’ ব্যবহার করে এই পদ্ধতিটি পরীক্ষা করেছেন। তারা দেখেছেন, নির্দিষ্ট একটি এনজাইম সক্রিয় করার মাধ্যমে ক্যানসার কোষগুলোর বৃদ্ধি থেমে যায় এবং সেগুলো আবার স্বাভাবিক কোষে রূপান্তরিত হয়। ডা. ট্রোসো-স্যান্ডোভাল বলেন, ‘এই গবেষণার ফলে এমন থেরাপি তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, যা রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপির তুলনায় অনেক কম বিষাক্ত হবে।’

প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো শুধু ক্যানসার কোষকেই ধ্বংস করে না, বরং শরীরের সুস্থ কোষগুলোরও ক্ষতি করে, যার ফলে ক্লান্তি, বমি, চুল পড়া, এমনকি নতুন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই গবেষণা ভবিষ্যতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য প্রতিরোধমূলক চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করতে পারে। যারা পারিবারিকভাবে ক্যানসারের ঝুঁকিতে আছেন বা ধূমপানের মতো ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদানের সংস্পর্শে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটি কার্যকর হতে পারে।

ওই গবেষণাটি জার্নাল ‘Advanced Science’-এ প্রকাশিত হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ