বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪২ অপরাহ্ন

গণঅভ্যুত্থানের লালে এসেছে পহেলা ফাগুন

রিপোটারের নাম / ৭২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মাহফুজ সাদি
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ০৮
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৩৪

তখন আষাঢ়-শ্রাবণ, বর্ষাকাল। বৃষ্টির মধ্যেই প্রকৃতিতে ছিল ফাগুনের প্রসব বেদনা। অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে ভরা উত্তাল আন্দোলন, স্লোগান আর বৈষম্য বিলোপের ডাক। বিপরীতে দিন-রাত চলছিল ফ্যাসিবাদের আস্ফালন, খুনিদের বুলেটের শব্দ আর মানুষের আর্তচিৎকার।

ঝরেছে অগণিত মানুষের তাজা রক্ত, সহস্র প্রাণ নিভেছে অবেলায়। এমন এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে পালিয়ে যায় ফ্যাসিবাদের কর্তা, লজ্জায় গা ঢাকা দেয় সাঙ্গপাঙ্গরা। আর রক্ত-প্রাণ-ত্যাগ করা বীর ছাত্র-জনতার বিজয় উৎসব চলতে থাকে।

তাই বর্ষাকালে বৃষ্টির বদলে গাওয়া হয় বসন্তের ফাগুনের জয়গান। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সবার প্রাণে নিয়ে এসেছে অনবদ্য ফাগুন। টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আন্দোলনের মুখে যখন দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান, তখন ঢাকা ছিল উৎসবের নগরী। ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হয় গ্রাফিতি।

শিক্ষার্থীদের সেই গ্রাফিতিতে বিভিন্নভাবে শোভা পায় খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার জহির রায়হানের ‘আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হব’ কথাটি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়া এই উক্তিটি ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’-এর।

উপন্যাসটির শেষ দিকে ছাত্রদের জেলে ঢোকানোর সময় হাঁপিয়ে ওঠা ডেপুটি জেলার বিরক্তির সঙ্গে বলেন, ‘উহু, এত ছেলেকে জায়গা দেব কোথায়। জেলখানা তো এমনিতে ভর্তি হয়ে আসছে।’ এর জবাবে ছাত্রদের মধ্য থেকে একজন চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘এতেই ঘাবড়ে গেলেন নাকি? আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হব।’ সাড়া জাগানো সেই শক্তিশালী কথাটি এবারের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে, যার ছাড় রয়ে গেছে দেয়ালের লেখা ও গ্রাফিতিতে।

বসন্ত আসার ছয় মাস আগেই ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) অর্থাৎ বর্ষাকালে ফাগুনকে বিভিন্নভাবে নিয়ে হাজির হয়েছেন বিপ্লবী শিক্ষার্থীরা। নানা রঙে, বিভিন্ন আকৃতি ও ছবি জুড়ে দিয়ে দেয়ালে দেয়ালে তারা লিখেছে, ‘এসেছে নতুন ফাগুন এবার আমরা হবোই দ্বিগুণ’, ‘সামনে আসছে ফাগুন আমরা হবো দ্বিগুণ’, ‘আসছে ফাগুন ALREADY দ্বিগুণ’, ‘এসেছে ফাগুন আমরা হবো দশগুণ’, ‘এসেছে ফাগুন আমরা হয়েছি শতগুণ’।

৫০-এর দশকে জহির রায়হানের বলা দ্বিগুণ ২০২৪ সালে এসে ছাত্রদের দ্বারা হয়েছে দশগুণ, শতগুণ। সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রেক্ষাপটে একই ধরনের ব্যবহারকারীদের দ্বারা ফাগুনের বিপ্লবী রূপ ফুটে উঠেছে। এ যেন ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তানি কর্তৃত্ববাদের মতো শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর হিম্মত জাগানিয়া উক্তি মিলে মিশে একাকার হয়ে যাওয়া।

সেই ফাগুনের প্রথম দিন আজ শুক্রবার। এদিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। ফলে এবার সত্যি সত্যি প্রকৃতিতে ফাগুন এসে গেছে, নতুন প্রাণ উঁকি দিচ্ছে সর্বত্র। সঙ্গে রয়েছে ভালোবাসার রং, ব্যগ্র একাগ্রতা। ফলে বিপুল শক্তির সম্ভার নিয়ে নতুন বাংলাদেশে হাজির হয়েছে দিনটি। প্রকৃতির সাজসাজ রবের সঙ্গে সবার মাঝে মিশে যাক ফাগুনের শতরূপ আর ভালোবাসার বন্ধন হোক মজবুত।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ