মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন

গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের তাগিদ থাকছে কেন্দ্রের

রিপোটারের নাম / ৭৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৩৩
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১: ১৯

ডিসি সম্মেলনে ৩৫৪ এজেন্ডা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শুরু হচ্ছে রোববার থেকে। এবারের সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং দূর্নীতি প্রতিরোধ, জনবান্ধব প্রশাসন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভূমিসেবাসহ হয়রানিমূক্ত সেবাখাত প্রতিষ্ঠাসহ ৩৫৪টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে তিনদিনের এ সম্মেলনের ৩৪টি কার্য- অধিবেশনে। পাশাপাশি জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের স্পিরিটকে প্রাধান্য দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাঠ প্রশাসনের প্রতি কেন্দ্রের নির্দেশনা থাকছে।

ডিসি সম্মেলন উপলক্ষ্যে শনিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ মো. আব্দুর রশিদ। এসময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মুখলেছ উর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. নাসিমুল গণিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এসময় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের ঘটনাবলী নিয়ে একটি ডকুমেন্টারী প্রদর্শন করা হবে। বাকি অধিবেশনগুলো সচিবালয়ের পাশে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে হবে। ৫৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ডিসিদের মতবিনিময়ের পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও পৃথক অধিবেশন হবে। তবে গতবারের মতো এবারও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কোনো বৈঠকের্ আয়োজন থাকছে না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এবারের সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব এসেছে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বাহিনীগুলোর বিষয়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের হাতে কীভাবে শতশত ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছেন এটা বিশ্ববাসী দেখেছে। অনেকে আহত চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাঠে কর্মরত সদস্যদের পোশাকের সঙ্গে একটি গোপন ক্যামেরা বা ডিভাইস সংযোজন করার বিষয়ে একটি প্রস্তাব এসেছে। এতে অপরাধীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এছাড়াও তাদের হাতে মানুষ যাতে মারা না যায় সেজন্য প্রাণঘাতি অস্ত্রের পরিবর্তে হালকা অস্ত্র দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সচিব বলেন, এবারের সম্মেলনে আলোচন্য সূচি অনুযায়ী উল্লেযোগ্য প্রস্তাব হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের বিভিন্ন উৎস হতে প্রাপ্ত আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন। জেলায় স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তি ও জাতীয়করণে জেলা প্রশাসকের মতামত গ্রহণ। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে উৎপাদন থেকে খুচরা বিক্রয় পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মূল্য তালিকা একটি কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ। ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও সেন্ট্রাল চার্জিং স্টেশন স্থাপন। কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক নাগরিকদের জন্য জেলা পর্যায়ে ওয়ান স্টপ সেবা চালুকরণ। ঢাকা জেলার নদ-নদী সমূহ অবৈধ দখল ও দূষণমুক্ত করার জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। পর্যায়ক্রমে এবতেদায়ী মাদ্রাসা সরকারিকরণ। নিবন্ধন পরিদপ্তরকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন হতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্তকরণ। খাস জমি বিনামূল্যে নামজারি করার বিধান সম্বলিত পরিপত্র জারি এবং ই- মিউটেশনে বিনামূল্যে নামজারি করার সুযোগ সন্নিবেশকরন। সকল জেলায় দুদকের কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ। মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর বিধিমালা তৈরিকরণ। জেলা প্রশাসকদের সাথে র‌্যাপিড রেসপন্স টিম রাখার।

এছাড়াও পর্যায়ক্রমে এবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণ, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও লোকবল নিশ্চিত করা, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে পতিটি ইউনিয়নে একটি করে ইটিপি স্থাপন, রবি মৌসুমে অনবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে গভীর নলকূপ স্থাপন, সার কারখানায় প্রর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা, কৃষকের জন্য বজ্রপাত নিরোধক ছাউনি স্থাপন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতলগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে আনসার নিয়োগ করা, ভূমিহীনদের অনুকূলে বন্দোবস্তকৃত খাস জমি বিনামূল্যে নামজারির বিধান করা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পোষ্য কোটা বাতিল করা, সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে জেলেদের সহজশর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা, দলিলমূল্যের ওপর নামজারি ফি নির্ধারণ করা, সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদের জন্য আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করা, তামাকের বিকল্প ফসল চাষিদের জন্য প্রণোদনা প্রদান, উপজেলা পর্যায়ে ক্রীড়া অফিসার পদ সৃষ্টি, অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক বদলি ও পদায়ন বিভাগীয় কমিশনারদের নিকট ন্যাস্ত করা।

বিগত জেলা প্রশাসন সম্মেলনে নেওয়া বেশকিছু প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকার এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গতিপূরণ না হওয়ায় সেগুলো বাস্তবাযন করা হয়নি বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, গত সরকারের সময় একটি পরিবারকে কেন্দ্রে করে কতগুলো প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। সেগুলো বাস্তবায়ন করতে বিপুল পরিমান অর্থেরও প্রয়োজন হতো। ফলে ওইসব প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। এবার ডিসিদের পক্ষ থেকে ১২শ প্রস্তাব এসেছে। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙে আলোচনা করে সেখান থেকে যাচাই করে ৩৫৪টি প্রস্তাব এজেন্ডাভূক্ত করেছি। যা দেশ ও জনগণের কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ