সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২২ অপরাহ্ন

গুলিতে চোখ হারিয়েছেন একমাত্র উপার্জনক্ষম

রিপোটারের নাম / ৭৬ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৫৪

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দুই চোখ হারিয়েছেন ঢাকার মগবাজারের বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার বাবা হাফিজ আহমেদ পূর্বে ইমামতি করতেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।

তার কাঁধে ছিল ভাইদের পড়াশোনার দায়িত্ব। কিন্তু ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সব হিসাব ওলটপালট হয়ে যায়। পুলিশের গুলিতে চোখ হারান তিনি। চোখের আলো নিভে যাওয়ার পর হারিয়েছেন চাকরিও। ফলে এখন তীব্র অর্থসংকটে পড়েছে তার পরিবার।

জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যখন দেশের মানুষ, বিশেষ করে ছাত্রসমাজ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে, তখন সাব্বিরও যোগ দেন তাদের সঙ্গে। প্রতিদিনই মিছিলে ছিল তার সরব উপস্থিতি। মুক্তির আশায়, দেশের ভবিষ্যতের দিকে এক গভীর দৃষ্টি রেখে প্রতিদিন আন্দোলনে যোগ দিতেন তিনি। তবে ৪ আগস্ট যখন তার কর্মস্থল থেকে আন্দোলনে যোগ দিতে যান, তখন তিনি জানতেন না তার জীবনে ঘোর অমানিশা নেমে আসবে।

সেদিন কারওরান বাজারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিছিলে ছিলেন সাব্বির। মিছিলটি ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু হঠাৎ পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের আক্রমণ শুরু হয়। বিকাল ৫টায় যখন তিনি আসরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই পুলিশের গুলি তার ডান চোখে লাগে। গুলি লাগার পর তার চোখ বের হয়ে আসে। এরপর বাম চোখে আঘাত পেয়ে নিভে যায় সে চোখের আলোও। মুহূর্তে অন্ধকার হয়ে যায় তার পৃথিবী। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার ও পরিবারের ভবিষ্যৎ।

এত সংকট ঘিরে ধরার পরও সাব্বিরের মনোবল অটুট। কিন্তু অর্থসংকট তাকে চিন্তায় ফেলেছে। তিনি বলেন, চোখ হারানোর পর চাকরি হারিয়েছি। পড়াশোনাও বন্ধ। তীব্র হয়ে উঠেছে আর্থিক সংকট।

সাব্বির জানান, জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে কিছু অনুদান তাকে দেওয়া হয়েছে। তবে সে অনুদান তার চিকিৎসা ও পরিবার নিয়ে চলার জন্য যথেষ্ট নয়।

‘বিভিন্ন মাধ্যমে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে বিদেশে নেওয়া হবে, কিন্তু এখনও এমন কোনো চেষ্টা দেখছি না। এখন আমি হতাশ, বিপর্যস্ত। পূর্বের মতো পরিবারে অবদান রাখতে পারি না’- যোগ করেন সাব্বির।

সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়ে সাব্বির বলেন, আমাকে যদি দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়, তাহলে পুনরায় নিজের জীবন গড়ে তুলতে পারব। আমার পরিবারও আবার সুখে দিনাতিপাত করতে পারবে।

চোখের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারিয়েছেন; কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্রও খেদ নেই সাব্বিরের। দেশের প্রতি ভালোবাসায় টইটম্বুর তার হৃদয়। তবে তিনি উদ্বিগ্ন জুলাইয়ের শহীদদের পরিবার নিয়ে। আহতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা জীবন দিয়েছেন, আমাদের উচিত তাদের সেই ত্যাগের মূল্যায়ন করা। আমার মতো যাদের ক্ষতি হয়েছে, রাষ্ট্রের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। স্বৈরাচারের পতন হলেও আমরা যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য নিয়ে দেশ সংস্কারের উদ্দেশ্যে রাস্তায় নেমেছিলাম, তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। দেশ সংস্কার হলেই কেবল দেশের মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ