মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৪ পূর্বাহ্ন

গেল মৌসুমের পারিশ্রমিকই পাননি অনেক ক্রিকেটার!

রিপোটারের নাম / ৮৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

পার্থ রায়
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ০০

এবারের বিপিএলে দুর্বার রাজশাহীর পারিশ্রমিক নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। এমনকি টুর্নামেন্ট শেষ হলেও এখনো পারিশ্রমিকের ৫০ শতাংশ বুঝে পাননি ক্রিকেটাররা। দেশের ক্রিকেটে পারিশ্রমিকের এই সমস্যা শুধু বিপিএলেই সীমাবদ্ধ- এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও (ডিপিএল) আছে পারিশ্রমিক সমস্যা। ক্রিকেটাররা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না- এমন অসংখ্য অভিযোগ আছে। গত মৌসুমে ডিপিএলে অংশ নেওয়া ১২ ক্লাবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন নিয়ে। এ দুই দলে খেলা ক্রিকেটারদের বেশিরভাগই বুঝে পাননি পারিশ্রমিকের পুরো টাকা। অথচ ২০২৩-২৪ মৌসুম শেষে এখন প্রস্তুতি চলছে ২০২৪-২৫ মৌসুম শুরুর।

শুরুটা করা যাক পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব দিয়ে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে দলটির হয়ে খেলেছিলেন জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার। ব্যাট হাতে সময়টা ভালো না যাওয়ায় বেশি ম্যাচ খেলতে পারবেন- এমন আশায় পারটেক্সে নাম লেখান এই ওপেনার। তবে শেষ পর্যন্ত পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় পারিশ্রমিকটাই আর পাননি মুনিম শাহরিয়ার। দলের পক্ষ থেকে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় অর্ধেক পারিশ্রমিকের পর আর কোনো টাকা দেওয়া হবে না। সেটাও নিশ্চিত করা হয়েছে গতকাল দুপুরে। তবে এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে তার পারিশ্রমিক পুরোপুরি পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছিল দলটি। শেষ পর্যন্ত কথা রাখেনি ক্লাবটি। জানিয়ে দেয়- পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় আর কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হবে না। মুনিম শাহরিয়ারের বকেয়া পারিশ্রমিকের বিষয়টি স্বীকার করেছেন দলটির কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন।

গত মৌসুমে ক্রিকেটারদের দলে ভেড়ানোর সময় কোনো চুক্তিপত্র করেনি পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব। মুনিম শাহরিয়ারসহ বেশ কজনকে মৌখিক চুক্তিতে দলে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্লাব কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন। তখন তাদের কিছু পারিশ্রমিক দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। তবে কত দেওয়া হবে- সেটা সে সময় নিশ্চিত করা হয়নি। কেন নিশ্চিত করা হয়নি, সেই ব্যাখ্যায় সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ওরা একরকম জোর করে পারটেক্সে খেলেছে। বাজেট না থাকায় ওইভাবে ক্রিকেটারদের কত দিতে পারবেন- সেটা জানতেন না বলে জানান তিনি। তবুও ক্রিকেটারদের কিছু পারিশ্রমিক দিয়েছেন বলে জানান। তবে কোন ক্রিকেটারকে কত পারিশ্রমিক দিয়েছেন, সেটা জানাননি।

মুনিমের মতো পারটেক্স স্পোর্টিংয়ের হয়ে খেলেছিলেন মিজানুর রহমান, মোহর শেখ অন্তর, তানবীর হায়দার, মুক্তার আলী, আহরার আমিন ও আসাদুজ্জামান পায়েলদের মতো ক্রিকেটার। এসব ক্রিকেটারের বেশিরভাগই পারিশ্রমিকের বেশিরভাগ অর্থ পাননি। কেন দেওয়া হয়নি- সে প্রশ্নের জবাবে ক্লাব কর্মকর্তা সাজ্জাদ আহমেদ জানান, ক্রিকেটাররা জোর করে তাদের দলে খেলেছেন এবং তাদের সঙ্গে কোনো লিখিত চুক্তি হয়নি। মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। সেখানেও তিনি বলে দিয়েছিলেন, যা পারবেন, সেটাই দেবেন। সে অনুযায়ী টাকা দিয়েছেন বলে সাজ্জাদ আহমেদ দাবি করেন।

ক্রিকেটারদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি না করার বিষয়টি নৈমত্তিক বলে দাবি করেছেন পারটেক্স স্পোর্টিংয়ের সঙ্গে থাকা এক কর্মকর্তা। তিনি আমার দেশকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে এমন করতেছে। এবারও করছে। ‘টাকা বুঝিয়া পাইলাম’ লিখে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে। ওই সময় ক্রিকেটারদের অল্প কিছু টাকা দিয়েছে। আর চুক্তিপত্র দেয় নেই। এতে ক্রিকেটাররা অভিযোগ করতে পারে, কিন্তু কোনো প্রমাণ থাকে না।’

শুধু পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবই নয়, গত কয়েক বছর ধরে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিরুদ্ধেও নিয়মিত অভিযোগ- ক্রিকেটাররা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। দলটির হয়ে গত মৌসুমে ডিপিএলে খেলেছেন জাতীয় দলের সাবেক পেসার আবু জায়েদ রাহি। ডিপিএল চলাকালে ব্রাদার্স ইউনিয়ন থেকে ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক পেয়েছেন বলে জানান তিনি। মৌসুম শেষে ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছেন দলটির ক্রিকেটাররা। তবে কোনোবারই কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক পাবেন- এমন কোনো নিশ্চয়তা পাননি। গত কয়েক মাস ধরে ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না বলেও জানান রাহি। জাতীয় দলের এই পেসারের মতো ব্রাদার্সের হয়ে খেলা অন্য ক্রিকেটাররাও পারিশ্রমিক না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তারাও ব্রাদার্স কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। দলটির কর্মকর্তা আমিন খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে সিসিডিএমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, পারিশ্রমিক না পাওয়ার ব্যাপারে কোনো ধরনের অভিযোগ তারা এখন পর্যন্ত পাননি। তাই তারা আপাতত কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।

এদিকে ক্রিকেটারদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো দেখার দায়িত্বে থাকা ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল আমার দেশকে বলেন, ‘পারটেক্স ও ব্রাদার্স থেকে টাকা না পাওয়ার ব্যাপারটি আমরা জানি। ব্রাদার্স গত তিন বছর ধরে এমন করছে। ওদের ব্যাপারে আমরা অতিষ্ঠ। আর পারটেক্সের ব্যাপারটা আমরা জানি; কিন্তু কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসেনি।’

পারিশ্রমিক ইস্যু ছাড়াও চুক্তিপত্র না করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘শুধু পারটেক্সই নয়, অনেকগুলো ক্লাবই এমন করে। আমরা অনেক দিন ধরেই দাবি করে আসছি, বিপিএলের মতো একটি সেন্ট্রাল কন্টাক্ট পেপার হোক। যেটা বিসিবি বা সিসিডিএম থেকে দেওয়া হবে। আর চুক্তিপত্র করতে না পারার দায় ক্রিকেটারদের। তারা কেন চুক্তিপত্র ছাড়া খেলবে? ওদের চুক্তিপত্র না থাকায় আমাদের কাছে অভিযোগ করার পরও আমরা কিছু করতে পারি না। তখন ক্রিকেটাররা ভাবে আমরা কিছু করছি না।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ