মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন

জাতিসংঘের সুপারিশে র‌্যাব কি বিলুপ্ত হচ্ছে

রিপোটারের নাম / ৭৫ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

আল-আমিন
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ২৭

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) তাদের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ বাংলাদেশের এই প্রথম কোনো বাহিনীকে বিলুপ্ত করার আহ্বান জানাল।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাহিনীটি ‘গুরুতর মানবাধিকার’ লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত। র‌্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলেও তারা বাহিনীটির বিলুপ্তির কথা বলেনি। কিন্তু এই প্রথম জাতিসংঘের পক্ষ থেকে র‌্যাবকে বিলুপ্তির জন্য বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, গুরুতর লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত নয়- এমন কর্মীদের স্ব-স্ব ইউনিটে ফেরত পাঠাতে। প্রতিবেদনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে তারা প্রস্তুত।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীতে স্বচ্ছতার জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা মানা হোক। পাশাপাশি র‌্যাবকে বিলুপ্ত না করলেও এ বাহিনীটির মধ্যে ব্যাপক সংস্কার জরুরি। নইলে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের ভাবমূর্তির ব্যাপক পরিমাণে ক্ষুণ্ণ হবে।

তবে র‌্যাবের পক্ষ থেকে একাধিকবার জানানো হয়েছে, অতীতের র‌্যাবের যে কর্মকর্তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ছিলেন, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

বিষয়টি জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা আমার দেশকে জানান, জাতিসংঘ যদি সঠিক কোনো অ্যাভিডেন্স দিয়ে র‌্যাবকে বিলুপ্ত করতে বলে, তাহলে সেটি আমলে নিতে হবে। জাতিসংঘের অভিযোগে কী কী সাক্ষ্যপ্রমাণ আনা হয়েছে, তা দেখতে হবে। যদি সরকার আবার মনে করে যে, সব অভিযোগ সত্য নয়, তাহলে বাহিনীর সংস্কার জরুরি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, র‍্যাব বিলুপ্তি নিয়ে জাতিসংঘ যেসব সুপারিশ দিয়েছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ বিষয় সম্পর্কে জানতে র‌্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শাহিদুর রহমানসহ একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন দিলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুম কমিশনের একজন সদস্য বলেন, আমরা শুরু থেকে র‌্যাবকে বিলুপ্তির পরামর্শ দিয়েছি।’

র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাহিনীটির বিরুদ্ধে নানা গুরুতর অভিযোগ ওঠে। কয়েকটি ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় হয়।

২০১৮ সালের ২৬ মে রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের নোয়াখালীপাড়ায় র‍্যাবের কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হন তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর একরামুল। হত্যার মুহূর্তের একটি অডিও ক্লিপ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাবের গাড়িতে ও র‌্যাবের জ্যাকেট পরা অবস্থায় তেজগাঁও থানার বিএনপি নেতা সুমনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ মেলেনি। তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ওই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ভিকটিমের পরিবারের কাছে আছে বলে জানা গেছে।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক (লিংকরোড) থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন অপহরণের শিকার হন। পরে তাদের লাশ নদীতে পাওয়া যায়। ওই ঘটনার সঙ্গে র‌্যাব-১১ এর ৩ সদস্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।

এমন সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে র‍্যাব এবং এ বাহিনীর ছয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের ফরেন অ্যাসেটস কনট্রোল অফিস। তারা কেউ যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারবেন না। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোন অর্থ প্রেরণ ও আনতে পারবেন না।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর র‌্যাবের ডিজি এ কে এম শহিদুর রহমানের পক্ষ থেকে প্রথম সংবাদ সম্মেলন করা হয় গত ১২ ডিসেম্বর। তিনি বলেছিলেন, র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুম খুনসহ কিছু অভিযোগ রয়েছে। র‌্যাবের দ্বারা যারা নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সে সবের বিচার নিশ্চিত করা হবে। ভবিষ্যতে এ বাহিনী এমন কোনো কার্যক্রমে কারো নির্দেশে জড়াবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ