বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৪ অপরাহ্ন

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যপ্লেক্সে আ.লীগ নেতার নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ

রিপোটারের নাম / ৬৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

উপজেলা প্রতিনিধি, বিয়ানীবাজার (সিলেট)
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ০৭

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাবার সরবরাহের নতুন ঠিকাদার নিয়োগ হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে এক যুগ ধরে স্থগিত রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ১৫ বার সময় বর্ধিত করে একাই খাবার সরবরাহ করছেন সঞ্জিব কর। তিনি বিয়ানীবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য। ৫ আগস্টের পরও বহাল তবিয়তে আছেন তিনি। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি আবার উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছেন।

সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার সুযোগে কোন তদারকি না থাকায় সঞ্জিব কর রোগীদের মাঝে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারিভাবে সরবরাহ করা সকালের নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবার এতোই নিম্নমানের যে এগুলো খেয়ে রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাছাড়া রোগীদের খাবার যে রান্নাঘরে তৈরি করা হয় তার অবস্থাও চরম অস্বাস্থ্যকর। গত কয়েক বছর থেকে এ অবস্থা চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্টদের তাতে কোনো গরজ নেই।

জানা যায়, ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশির ভাগ আবাসিক রোগী মহিলা ও শিশু। সিলেট জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি ভালো মানের সেবা দেয়ায় এখানে রোগীর সংখ্যা বেশি। একাধিকবার হাসপাতালটি জাতীয় পুরস্কারও লাভ করেছে। বিশেষ করে সিজারিয়ান অপারেশনে সফলতার কারণে দেশব্যাপী সাড়া ফেলেছে এ প্রতিষ্ঠান। তবে খাবার সরবরাহ নিয়ে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। এখানে বোয়াল মাছের বদলে রোগীদের দেয়া হয় পাঙ্গাস, এমন বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যান্য যেসব খাবার সরবরাহ করা হয় সেগুলোও অস্বাস্থ্যকর।

হাসপাতালের প্রধান সহকারী রফিক উদ্দিন বলেন, কে.বি সাইন নামক একটি প্রতিষ্ঠান গত কয়েক বছর থেকে এখানে খাবার সরবরাহ করছে। ২০১৩ সালে খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলে সংক্ষুব্দ হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সঞ্জিব কর হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তিনিই এখনো পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোগীদের সপ্তাহে তিনদিন মাংস ও চারদিন মাছ সরবরাহ করার কথা থাকলেও ১০ দিনেও একদিন মাংস সরবরাহ করা হয়না। বাকি দিন রুই, কাতল ও মৃগেল মাছের বদলে দেয়া হয় পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ। মাছের মাথা ও লেজ বাদ দিয়ে রোগীদের দেয়ার নিয়ম থাকলেও তাও মানা হচ্ছে না। চিকন চালের বদলে রোগীদের খাওয়ানো হয় মোটা ও নিম্নমানের চাল। রোগীরা সাধারণত ওই খাবার খেতে চান না। এখানে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও নার্সিং সুপার ভাইজারের উপস্থিতিতে সরবরাহকৃত মালামাল রান্নার জন্য প্রস্তুতির কথা বলা হলেও তা করা হয় না। সংশিস্নষ্ট ঠিকাদার তার ইচ্ছামাফিক পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। রোগীদের খাসির মাংসের বদলে ব্রয়লার ও রুই মাছের বদলে পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ দেয়া হলেও সরকারি নিয়মে খাসি ও রুই মাছের বিল উত্তোলন করছেন ঠিকাদার।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কে.বি সাইনের স্বত্ত্বাধিকারী সঞ্জিব কর দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালে খাবার ও মনোহরি দ্রব্য সরবরাহ এবং ধোলাই’র টেন্ডারে অংশ নেন এবং নিয়মিত তিনি টেন্ডার পানও বটে। শুধুমাত্র ২০১৩ সালে এর কিছুটা ব্যতিক্রম হওয়ায় তিনি বাদী হয়ে উচ্চ আদালতে রিট করায় আদালত তার পক্ষেই রায় দেন।

এ প্রসঙ্গে সঞ্জিব কর জানান, আইন অনুযায়ী তিনি খাবার সরবরাহ করছেন। তাছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তদারকিতে রোগীদের মধ্যে তা সরবরাহ করা হয়।

বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মনিরুল হক খান বলেন, নিম্নমানের খাবার সরবরাহের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো। বিষয়টি নিয়ে আইনি জঠিলতা এড়াতে আপিল করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিক চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেন তাহলে তাদের কিছু করার নেই বলেও তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ