জুলাই বিপ্লবে আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের একটি বীরোচিত ভূমিকা ছিল মন্তব্য করে আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, আমার জানামতে এই বিপ্লবে আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসার ছাত্ররা সমাজের বিভিন্ন পেশার জনগণকে সাথে নিয়ে এই যাত্রাবাড়ী এলাকায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার বাহিনীর বিরুদ্ধে এক অপ্রতিরোধ্য শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এতে খুনি হাসিনার পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার সেবা সংস্থা আল-বিলদান ফাউন্ডেশন আয়োজিত ইসলামি মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে বক্তব্য রাখেন শিল্পপতি আলহাজ্ব এমএ সাত্তার খান। এছাড়া ওয়াজ করেন দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর মুধুপুরী, জুনায়েদ আল হাবিব, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, শায়েখ মুফতি হারুন ইজহার, মুফতি হাবিবুল্লাহ কাসেমী, মুফতি রেজাউল করিম আবরার, মুফতি জয়নুল আবেদীন আল হোসাইনী, মাওলানা হারুনুর রশিদ, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মুফতি আহমদ আলী, মাওলানা মুখলেছুর রহমান কাসেমী, মুফতি ছাকিবুল ইসলাম কাসেমী, মুফতি এবিএম শরিফউল্লাহ, মাওলানা শাহ মুহাম্মদ তৈয়্যেব আশরাফ, মুফতি ফখরুল হাসান মাসউদ কাসেমী, মুফতি মাহফুজুর রহমান জাবের, মুফতি আশরাফ মাহদী, মুফতি ওয়ালি উল্লাহ ফারুক কাসেমী, মুফতি সাইফুল্লাহ নোমানী, ক্বারী হোসাইন আহমদ রহমানী, মুফতি আবুবকর মুহাম্মদ যুবাইর কাসেমীসহ দেশ বরেণ্য আলেমগণ।
বিগত ১৫ বছরে আলেমদের উপর জুলুম নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বলেন, বিগত সময়ে এদেশে ইসলাম প্রিয় মানুষ অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদেশের আলেমরা ইসলামের কথা বলতে পারেননি। কুরআনের কথা বলতে গিয়ে আলেমরা জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। তরুণ প্রজন্মকে সালাম জানাই, তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেছে, রক্ত দিয়ে আমাদেরকে একটি সুন্দর পরিবেশ এনে দিয়েছে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আমাদের আত্মতৃপ্তি লাভের কোনো সুযোগ নেই। এখনো আমরা বিপদমুক্ত হইনি। বিপ্লব ব্যর্থ করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন আলেম সমাজ। আলেমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, তরুণদের আত্মত্যাগে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে জালিমের বিরুদ্ধে ইসলামের বিজয় হয়েছে। বিপ্লবের পর গঠিত সরকারের অনেক সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত নাও হতে পারি। কিন্তু এরপরও জাতীয় ইস্যুতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তাই আলেম সমাজকে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা অপপ্রচার চালিয়ে ক্ষতি না করতে পারে।
তিনি বলেন, নামাজ রোজা হজ যাকাতের বাইরেও অনেক ক্ষেত্রে ইসলামের খেদমত করার সুযোগ রয়েছে। আমি কোনো ইসলামের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই। এরপরও মুসলমান হিসেবে আমার অবস্থান থেকে খেদমত করার চেষ্টা করছি।
মাহমুদুর রহমান বলেন, আলেমদের বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমে কখনো তুলে ধরা হয় নাই। তথাকথিত এলিট মিডিয়া দেশের আলেমদের প্রাপ্য মর্যাদা দেয়নি। আমার দেশ সেই বৃত্ত ভেঙ্গে দিয়েছে। আমরা গত বছরের ২২ ডিসেম্বর থেকে দিন ধরে আলেমদের নির্যাতনের ইতিহাস বর্ণনা করেছি। আমার দেশ পত্রিকায় আলেমদের বক্তব্য-বিবৃতি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়।
তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিটি সৈনিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তরুণরা যদি বিপ্লব না করত তাহলে আমি আপনাদের সামনে কথা বলতে পারতাম না। আমার দেশ নতুন করে প্রকাশিত হত না। তাই আমি জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহত সকলকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
এসময় তিনি তরুণ প্রজন্মের প্রশংসা করে বলেন,আমি যে তরুণদের ভেবেছিলাম ফেসবুকে মত্ত,যারা স্মার্ট ফোন ছাড়া কিছু বোঝে না, সেই তরুণরা বুকের রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা উদ্ধার করেছে। স্বৈরাচারকে তারা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। আমি বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পাই। জুলাই বিপ্লবে আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের একটি বীরোচিত ভূমিকা ছিল।