ক্ষমতা নেওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে বিতাড়িত হয়েছে শতাধিক অভিবাসী। এবার ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিকে অনুসরণ করছে ব্রিটেন সরকার। নিজ দেশে অবস্থানকারী অবৈধ অভিবাসী বিশেষ করে ভারতীয় শ্রমিকদের বিতাড়িত করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে লেবার সরকার।
অভিবাসীদের আটকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করেছে সরকার। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বেআইনি অভিবাসীদের। ভারতীয় রোস্তোরাঁ, নেইল বার, গাড়ি ধোয়া ও অন্য দোকানগুলোয় অভিযান চালানো হচ্ছে। কারণ এসব স্থানে যারা কাজ করেন, তাদের বেশিরভাগই নথিহীন অভিবাসী।
ব্রিটেনজুড়ে ঝটিকা অভিযান নামে এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার। স্বরাষ্ট্র বা হোম অফিস জানিয়েছে, অবৈধ শ্রমিকদের সন্ধানে জানুয়ারি মাসে ৮২৮টি স্থানে অভিযান চালানো হয়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি। এতে ৬০৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, এই সংখ্যাও আগের বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি।
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তথ্যানুসারে, মূলত সারা দেশে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও রেস্তোরাঁ, টেকঅ্যাওয়ে, ক্যাফে, খাবার ও তামাকশিল্পে ব্যাপক হারে অভিযান চালানো হয়েছে। উত্তর ইংল্যান্ডের হাম্বারসাইডে একটি ভারতীয় রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার ও চারজনকে আটক করা হয়।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কুপার বলেছেন, অভিবাসীদের অবশ্যই এদেশের অভিবাসন আইনকে সম্মান করতে হবে এবং মানতে হবে। দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ অভিবাসীদের নিয়োগ দিয়ে নিয়োগ কর্মকর্তারা তাদের ওপর বিভিন্নভাবে নিপীড়ন করেছেন, যার কোনো সুরাহা হয়নি। কিন্তু এবার তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসার পর এরই মধ্যে ১৯ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ছোট নৌকায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এদেশে আসা এবং কাজ করা অভিবাসীদের জন্য যেমন বিপজ্জনক, তেমনি এদেশের অর্থনীতির জন্যও হুমকিস্বরূপ।
এদিকে অভিবাসনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান দেখাতে ‘শো, নটল টেল’ কৌশল অবলম্বন করছে প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার সরকার। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চারটি নির্বাসন ফ্লাইটের মাধ্যমে আটশ’রও বেশি অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিতাড়িত এই অভিবাসীদের বেশিরভাগই মাদক, চুরি, ধর্ষণ ও খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত অপরাধী। এদের হাতকড়া পরিয়ে সীমান্ত বাহিনীর কাছে দেওয়া হয় বিমানে তোলার জন্য।
হোম অফিসের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছরের ৫ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসী ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযানের হার ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে এক হাজার ৯০টি স্থানে দেওয়ানি শাস্তির নোটিশ দেওয়া হয়েছে, যেখানে একজন অবৈধ কর্মীর জন্য নিয়োগকর্তাকে গুনতে হবে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার পাউন্ড জরিমানা।
ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালক এডি মন্টগোমারি বলেন, সরকারের কঠোর অভিযানের ফলে যারা অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করছে, তারা এই আইন থেকে পালানোর কোনো সুযোগ পাবে না। তিনি আরও বলেন, অবৈধ অভিবাসীরা প্রায়ই অমানবিক পরিস্থিতিতে কাজ করতে বাধ্য হয়। তাই তাদের সুরক্ষার বিষয়টিকেও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এই অভিযান এমন সময় চালানো হচ্ছে যখন লেবার সরকারের বর্ডার সিকিউরিটি, অ্যাসাইলাম ও ইমিগ্রেশন বিল পার্লামেন্টে দ্বিতীয় পাঠের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। নতুন এই আইন অপরাধী চক্রকে ভাঙ্গার পাশাপাশি সীমান্ত নিরাপত্তাকে জোরদার করবে। এতে অবৈধভাবে এদেশে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন জব্দ করার মতো নতুন ক্ষমতা দেওয়া হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে।