মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া-পরবর্তী করণীয়

রিপোটারের নাম / ৮৩ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ডা. খাদিজা সিদ্দিকা
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৩১

আমাদের দেশে প্রতিবছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে, সেই সঙ্গে গত বছর আমরা অনেক চিকুনগুনিয়া রোগীও পেয়েছি। ডেঙ্গুতে মৃত্যু এখনো আশঙ্কাজনক, তবুও বেড়েছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ সংক্রমণের ঝুঁকি।

চিকুনগুনিয়া-পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি বাতব্যথা প্রমাণিত হলেও ডেঙ্গু-পরবর্তী বাতব্যথা এবং তার দীর্ঘ সূত্রতা বর্তমান সময়ে আমরা চিকিৎসকরা প্রতিদিন চিকিৎসা দিতে গিয়ে অহরহ দেখতে পাচ্ছি এবং কিছু গবেষণায় ও ডেঙ্গু-পরবর্তী বাতব্যথা বা ক্রনিক রিউম্যাটিজমের উল্লেখ পাওয়া যায়, যদিও তীব্রতার দিক থেকে তা চিকুনগুনিয়ার থেকে কম।

বাতব্যথার লক্ষণ

জ্বরের সঙ্গে গিরাব্যথা । গিরা ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া । ব্যথার জন্য হাঁটতে না পারা বা দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে না পারা । এ ছাড়া রাতে এ ব্যথা থাকা।

চিকুনগুনিয়া-পরবর্তী বাতব্যথার দুটি ধাপ

১. অ্যাকিউট বা তীব্র ধাপ

২. ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি ধাপ

কখন বুঝবেন ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে

যদি জ্বর কমে যাওয়ার তিন মাস পরও ব্যথা থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে । চিকুনগুনিয়া-পরবর্তী বাতব্যথার দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার হার শতকরা ৮৪ দশমিক ৬ ভাগ হলেও ডেঙ্গুজ্বর-পরবর্তী এই হার ৬৩.০২ শতাংশ ।

কাদের বেশি হয়

  • মহিলাদের
  • যাদের পারিবারিক ইতিহাস আছে বাত রোগের
  • যাদের অনির্ণীত বাত রোগ ছিল বা রোগের ঝুঁকি ছিল তাদের

চিকিৎসা

অ্যাকিউট ধাপে চিকিৎসক প্রথমে আপনার জ্বর ও ব্যথাকে ডেঙ্গু হিসেবে চিকিৎসা দেবেন যতক্ষণ না নিশ্চিত রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে যে আপনার ডেঙ্গু হয়নি অথবা ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া কোনোটিই হয়নি, ততক্ষণ আপনাকে অ্যাসপিরিন-জাতীয় ব্যথার ওষুধ দেওয়া হবে না ।

এই সময় কী করা যাবে

ব্যথানাশক হিসেবে শুধু প্যারাসিটামল ব্যবহার করতে হবে

ঠান্ডা সেঁক দিতে হবে, এতে ব্যথা উপশম হয়

নরমাল চলাফেরা ও কাজকর্ম চালিয়ে যেতে হবে, না হলে আক্রান্ত গিরা শক্ত হয়ে যেতে পারে

কী করা যাবে না

অ্যাসপিরিন বা NSAIDs জাতিও ওষুধ কোনোভাবেই নেওয়া যাবে না (চিকিৎসকের ব্যবস্থাপনা ছাড়া)

স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খুব বেশি হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করা যাবে না ।

ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি ধাপ

জ্বর কমে যাওয়ার তিন মাস পরও যদি ব্যথা না কমে তাহলে—

  • হাসপাতালে আর্থ্রালজিয়া ক্লিনিকে যোগাযোগ করবেন
  • ক্লিনিক আপনাকে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা দিতে পারেন, যেমন NSAIDs/হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন/স্টেরয়েড
  • ফিজিওথেরাপি দিতে পারেন
  • আপনার অন্য কোনো ধরনের বাত রোগ যেমন : রিউমেটোইড আর্থ্রাইটিস আছে কি না, তা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় ও যথাযথ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে

কখন ফিজিওথেরাপি নেওয়া যাবে

চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে তীব্র ধাপ অতিক্রম করলে এবং ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে অবশ্যই এনএস ওয়ান টেস্ট নেগেটিভ হতে হবে, কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা জ্বর থাকা যাবে না, কোনো বিপৎসংকেত থাকবে না ।

ফলোআপ : যদি চিকিৎসা করা সত্ত্বেও ব্যথা না কমে, তবে নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই দীর্ঘমেয়াদি বাতব্যথা ভালো হয়ে গেলেও কিছুসংখ্যক রোগীর পরে রিউমেটোইড আর্থ্রাইটিসের মতো বাত রোগ হতে পারে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক

সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ