পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কিছু টানাপোড়েন থাকলেও ভালো ওয়ার্কিং রিলেশন রাখতে সম্মত দুই দেশ। শিগগিরই ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা জানান।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মাস্কাটে অষ্টম ভারত মহাসাগর সম্মেলনের (আইওসি) সাইড লাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে এস জয়শঙ্করকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান তৌহিদ হোসেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। তবে সফরের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জয়শঙ্করের সফরের বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বলেছি, আমাদের তো পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে, মন্ত্রী পর্যায়েও কিন্তু আমাদের একটা মেকানিজম আছে। আমি তাকে বলেছি, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতবার আপনাদের দেশে গেছেন, এখন আপনার আসার কথা ঢাকায়। আপনি সময় জানালে আমরা ব্যবস্থা করব। আমন্ত্রণের বিষয়ে জয়শঙ্করের কী বলেছেন জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, তিনি ইতিবাচক।
তৌহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যে টানাপোড়ন ছিল সেটা সবাই জানে। আমরা স্বীকারও করেছিলাম। ব্যবসা মোটামুটি পিকআপ করেছে। দেখা গেছে যে, আগের লেভেলে পৌঁছে গেছে, এগুলো ইন্ডিকেশন। কিছু টানাপোড়ন এখনও রয়ে গেছে, যেমন-ভিসাসহ কিছু সমস্যা আছে। কিন্তু দুই পক্ষই আমরা মোটামুটি এ ব্যাপারে একমত হয়েছি যে, এগুলো সব দূর করে একটা গুড ওয়ার্কিং রিলেশনে আমাদের পৌঁছাতে হবে।
দুই দেশের টানাপোড়েনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমরা নির্দিষ্ট করে বলিনি যে, এই উদ্বেগ আছে। আমরা স্বীকার করেছি, কিছু উদ্বেগ রয়ে গেছে, এগুলো আমাদের দূর করতে হবে। দুইপক্ষ একমত এগুলো দূর করতে হবে, সম্পর্কটা যাতে উন্নত হয় সেটা দেখতে হবে।
ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরানোর আলোচনায় উপদেষ্টা বলেন, ওটা নিয়ে নির্দিষ্ট করে আলোচনা হয়নি। আমরা ইন জেনারেল সবগুলো নিয়ে কথা বলেছি।
শেখ হাসিনাকে সরিয়ে রেখে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে পাল্টা প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, সরিয়ে রাখার ব্যাপার না। কোর্ট চেয়েছে তাকে, আমরা অনুরোধ করেছি ফেরত দেওয়ার জন্য, তার মানে এই নয় যে আমরা বাকি সব কিছু নিয়ে বসে থাকব। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সর্ম্পক স্বাভাবিক হওয়া নিয়েও কোন প্রশ্ন তুলেনি ভারত।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধ নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অর্থায়ন বন্ধ করেছে এটাতে শুধু বাংলাদেশ নির্দিষ্ট নয়। আর এখানে এই মুহূর্তে আমাদের কিছুই করার নেই। আমি মনে করি, আমাদের দেখতে হবে এবং আমাদের বিকল্প উপায়ে কীভাবে সংগ্রাম করতে পারি, এটা দেখতে হবে।
উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
ডিওজিই বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্প ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ’-এ ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে। ভারতের ২১ মিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।