তামাক মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তামাকজাত পণ্যে থাকা নিকোটিন ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার ও শ্বাসজনিত রোগের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস), ২০১৭’ অনুযায়ী, দেশে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সিদের ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ তামাক ব্যবহার করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে আট মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে তামাকের সহজলভ্যতা এর প্রভাব আরও গুরুতর করে তুলছে।
ধূমপানের ক্ষতি
সিগারেট ও বিড়ির ধোঁয়ায় রয়েছে সাত হাজারের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য, যার মধ্যে ৭০টি ক্যানসারের কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এটি ফুসফুস ক্যানসার, COPD ও অ্যাজমার প্রধান কারণ।
তামাকশিল্প ও ক্ষতি
তামাক কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন ও মূল্যছাড়ের মাধ্যমে তরুণদের আসক্ত করছে, যদিও তামাকশিল্প কর রাজস্ব জোগান দেয়, তবে স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে ক্ষতি অনেক বেশি। ২০১৯ সালের গবেষণা অনুযায়ী, তামাকজনিত রোগে বার্ষিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
ফুসফুসে ধূমপানের প্রভাব
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ধূমপানে ঝুঁকি ৮০-৯০ শতাংশ। সিগারেট থেকে নির্গত টার ও অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান ফুসফুসের কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা ফুসফুস ক্যানসারের মূল কারণ।
ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD)
ধূমপানে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় এবং বায়ুথলিগুলোর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হওয়ায় শ্বাসকষ্ট বাড়ে (এমফাইসিমা, ক্রনিক ব্রংকাইটিস)।
অ্যাজমা : ধোঁয়া শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে, উপসর্গ বাড়ায়।
ফুসফুসের সংক্রমণ : ধূমপান শ্বাসতন্ত্রের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
ধূমপানের কারণে ফুসফুসের স্বাস্থ্যে অবনতির লক্ষণ
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা
তামাক বা ধূমপানের কারণে শরীরে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ণয় এবং সংশ্লিষ্ট রোগ নির্ধারণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করা হয়।
১. ফুসফুসের কার্যক্ষমতা মূল্যায়ন
ফুসফুসের বায়ুপ্রবাহের পরিমাপ করার মাধ্যমে শ্বাসতন্ত্রের রোগ, যেমন ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) বা অ্যাজমা শনাক্ত করা সহায়ক হয়।
২. ফুসফুসে সংক্রমণ বা ক্ষতি শনাক্তকরণ
৩. রক্তের পরীক্ষা
(ক) আর্টেরিয়াল ব্লাড গ্যাস (ABG)
রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা মাপা হয়।
(খ) সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা (CBC)
৪. ক্যানসার শনাক্তে বিশেষ পরীক্ষা
(ক) বায়োপসি : সন্দেহজনক টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়।
(খ) টিউমার মার্কার টেস্ট : ফুসফুস ক্যানসারের প্রাথমিক অবস্থা নির্ণয়ে রক্তে কিছু নির্দিষ্ট প্রোটিন বা মার্কার চিহ্নিত করা হয়।
৫. হৃদরোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা
৬. ফুসফুসে সংক্রমণ বা টিবি শনাক্তকরণ
তামাক ব্যবহার বন্ধে করণীয় ও প্রতিরোধের উপায়
১. ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা
২. চিকিৎসা ও থেরাপি
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা
তামাক প্রতিরোধের উপায়
১. জনসচেতনতা
২. আইন ও নিয়মকানুন
৩. তরুণদের সুরক্ষা
তামাক পাতা ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
শেষ কথা
ফুসফুস সুস্থ রাখতে ধূমপান বর্জন ও কঠোর তামাক নিয়ন্ত্রণ জরুরি। আইন বাস্তবায়ন, বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধকরণ ও তামাকশিল্প নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব।
লেখক: এডমিন অফিসার ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ
ডিএনসিসি ডেডিকেটেড হাসপাতাল
মহাখালী, ঢাকা