পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হকের ১২ কোটি টাকার এফডিআর, জমির দলিলসহ দুই বস্তা নথি জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার রাতে মিরপুরে তার নিকট এক আত্মীয় বাসা থেকে নথিগুলো উদ্ধার করা হয়। দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র আমার দেশকে নিশ্চিত করেছে।
দুদক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল শহিদুল হকের এক আত্মীয়র বাসায় তল্লাশি চালায়। এ সময় দুটি বস্তায় মোট ৪৮টি আলামত পাওয়া যায়। এর মধ্যে ছিলো মূল্যবান সম্পদের দলিল, বিভিন্ন গোপনীয় চুক্তিপত্র, ডিড অব অ্যাগ্রিমেন্ট, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, বন্ড, এফডিআর, ব্যাংক হিসাব বিবরণী ইত্যাদি।
প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ সম্পদের এ তথ্য অনুসন্ধান কার্যক্রমে সহায়ক হবে বিবেচনায় কমিশনের কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ সাক্ষীর উপস্থিতিতে আলামতগুলো জব্দ করে।
দুদক আরো জানায়, এ কে এম শহিদুল হকে বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে দুদক জানতে পারে, শহিদুল হক তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য সংবলিত নথিপত্র তার এক নিকটাত্মীয়ের কাছে দুটি বস্তায় ভরে পাঠিয়েছেন। এসব নথিপত্রে শহিদুল হকের বেআইনিভাবে অর্জিত কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য রয়েছে।
এর আগে, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) শহিদুল হক, তার স্ত্রী শামসুন্নাহার রহমান এবং তাদের তিন সন্তানের নামে থাকা ৭২টি ব্যাংক হিসাবে ৫৬০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছিল।
অনুসন্ধানে তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশনের একাধিক ব্যাংক হিসাবেও বিপুল লেনদেননের তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই ৭২টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৫৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা জমা পড়েছিল, যার মধ্যে ৫৫০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। বর্তমানে এসব হিসাবে মাত্র ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য বিএফআইইউ ওই প্রতিবেদন দুদকে পাঠায়।
শহীদুল হক ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আইজিপির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই ২০০৯ সালে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হন।
সরকার পতনের পর শহীদুল হককে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বরে ঢাকার উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে বিভিন্ন থানার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে কয়েক দফায় রিমান্ডেও নেওয়া হয় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শককে।