বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২১ অপরাহ্ন

নিরাপত্তা বাহিনী কাছ থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে

রিপোটারের নাম / ৪৯ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১০: ৪৫

নিরাপত্তা বাহিনী নির্দোষ বিক্ষোভকারীদের খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ছাড়া আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশে মাথা ও ঘাড় লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ধারাবাহিকভাবে হত্যা, নির্যাতন, কারাদণ্ড এবং অন্যান্য অমানবিক নিপীড়নের মতো নিষিদ্ধ কাজ ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট সময়কালে নির্দিষ্ট কিছু বেসামরিক নাগরিকের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। যাদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন চালানো হয়েছে তারা হলেন— বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী এবং সরকার যাদের সন্দেহ করেছিল যে তারা বিক্ষোভে যোগদান করবে বা অন্যথায় সমর্থন করবে। এর মধ্যে রয়েছে ছাত্র, বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক, তরুণ ও বেকার।

আওয়ামী লীগের দ্বারা আন্দোলনকারীদের হত্যার ঘটনা মানবতাবিরোধী অপরাধ হতে পারে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে যে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হত্যাকাণ্ড রোম সংবিধির ৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সমান হবে।

কিছু ক্ষেত্রে, নিরাপত্তা বাহিনী নির্দোষ বিক্ষোভকারীদের খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। অন্য অনেক ক্ষেত্রে, নিরাপত্তা বাহিনী রাইফেল এবং স্বয়ংক্রিয় পিস্তল থেকে জনতার মাথা এবং ঘাড় লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ ধরনের গুলি ছোড়া ব্যক্তি ও তাদের কমান্ডাররা জানতেন যে, এর কারণে বিক্ষোভকারীদের প্রাণ যাবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও নিরাপত্তা বাহিনীর বেআইনি কার্যক্রম তুলে ধরে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়া, অথবা চাপাতি ও অন্য ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিক্ষোভকারীদের উপর আক্রমণ করে অমানবিক কাজ করে। যার কারণে হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। কেউ চোখ হারিয়েছেন, কেউ হয়েছেন পঙ্গু, কারো আঘাত লেগেছে মাথায়, কারো উড়ে গেছে খুলি; এছাড়া অনেকের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জুলাই বিপ্লবে আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা ছিল নেতিবাচক। প্রতিবেদনে নিরাপত্তা বাহিনী প্রসঙ্গে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনী তাদের হেফাজতে বা নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতন করেছে। পুলিশ, গোয়েন্দা শাখা এবং ডিজিএফআই-এর আটক কেন্দ্রগুলোতে স্বীকারোক্তি আদায়, তথ্য সংগ্রহ এবং ভয় দেখানোর জন্য প্রচণ্ড মারধর, বৈদ্যুতিক শক, মৃত্যুদণ্ডের হুমকি এবং অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়।

ব্যাপক গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করায় কর্তৃপক্ষ নির্বিচারে আটক হাজার হাজার মানুষকে কারাদণ্ড দেয়। ওয়ারেন্ট ছাড়াই ভুক্তভোগীদের বাড়িতে অভিযান, গণহারে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে শিশুদেরও আটক করা হয়, আটক অবস্থায় তাদেরও নির্যাতন করা হয়।

সরকারি নীতির বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ওএইচসিএইচআর-এর বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত আক্রমণ সরকারি নীতি অনুসারে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য পরিচালিত হয়।

রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা নেতৃত্ব বিক্ষোভকে সহিংস ও বেআইনিভাবে দমন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বাহিনী এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বও সেই নীতি অনুসরণ করে সংঘটিত অপরাধ গোপন করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা চালায় ইচ্ছামতো ইন্টারনেট বন্ধ করে, অন্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে এবং মিডিয়া, ভুক্তভোগী, ভুক্তভোগী পরিবার এবং আইনজীবীদের ভয় দেখিয়ে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ