রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২২ পূর্বাহ্ন

বিয়ের সাড়ে ছয় মাসের মাথায় বিধবা হন স্ত্রী

রিপোটারের নাম / ৭৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

হাসান মাহমুদ, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর)
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ১৯

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ঢাকার রাজপথ তখন উত্তপ্ত। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষ ছাত্রদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে এসেছে। বাড্ডায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত আবদুল হান্নানও তখন নেমে আসেন রাস্তায়। রাজধানীর বাড্ডা এলাকা তখন ছাত্রদের আন্দোলনে উত্তাল। ১৮ জুলাই মধ্য বাড্ডা এলাকায় মিছিল করার সময় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ছেলে হান্নান।

আন্দোলনরত ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন তাকে। বিয়ের মাত্র ৬ মাস ১৪ দিন পর এভাবেই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আজ্ঞাবহ পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণে ঝরে যায় একজন যুবকের জীবন। আর স্বামীকে হারিয়ে অকালে বিধবা হলেন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিবি হাওয়া মুক্তা (২০)।

বিবি হাওয়া মুক্তা (২০) চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের হোটনী গ্রামের বেপারী বাড়ির মো. স্বপন মিয়ার মেয়ে। গত বছরের ৬ জানুয়ারি একই ইউনিয়নের মৈশামুড়া গ্রামের বড় বাড়ির আমিন মিয়ার ছেলে আব্দুল হান্নানের সঙ্গে বিয়ে হয়। স্বামী আব্দুল হান্নান রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় একটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সময় পেলেই চাকরির পাশাপাশি গত জুলাইয়ের শুরুতেই সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতেন আটাশ বছর বয়সি আব্দুল হান্নান। তখন দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ সরকার কঠোরহস্তে এ আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তখন শুরু হয় ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ। আর স্বৈরাচার সরকারের সেই বুলেট বিদ্ধ হয় আব্দুল হান্নানের শরীরে।

আর পৃথিবীতে আসার আগেই বাবাকে হারাল এক অনাগত সন্তান। হান্নানের মৃত্যুর চার মাস পর জন্ম নেয় তার কন্যা সন্তান। হান্নানের দেওয়া নামেই নবজাতকের নাম রাখা হয় উম্মে হানী।

এই নবজাতক সন্তানকে নিয়ে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন বিবি হাওয়া মুক্তা। আমার দেশকে তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারিভাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এতে তিনি সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ভাবনায় নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। তার প্রশ্ন কী হবে ছোট্ট শিশু উম্মে হানীর, আর তিনিইবা কী করবেন? বর্তমানে তিনি কন্যা সন্তানকে নিয়ে শ্বশুরালয়ে বসবাস করছেন।

হান্নানের বাড়িতে গেলে দেখা গেল শোকের সেই ক্ষতচিহ্ন। নাড়ি ছেড়া ধন সন্তানকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যান শহীদ হান্নানের বাবা আমিন মিয়া ও মা রাশিদা বেগম। আর পরিবারের সদস্য ও স্বজনের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। তারা কিছুতেই হান্নানের স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে চাঁদপুরের ৩১ জন শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে হাজীগঞ্জের চারজন রয়েছেন। আবদুল হান্নান তারই একজন। এই চারজনের মধ্যে হাজীগঞ্জে একজন এবং পুলিশের গুলিতে ঢাকায় দুজন ও কুমিল্লায় একজন নিহত হয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ