সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩১ অপরাহ্ন

ব্যর্থ হলো আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের প্যারিস হামলা পরিকল্পনা

রিপোটারের নাম / ৭০ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস

জামান ইবনে হাবিব, প্যারিস (ফ্রান্স)
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭: ৪৬

পরাজিত ও পলাতক আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হুমকি-ধামকি, ষড়যন্ত্র ও প্রতিরোধের ঘোষণার পরও নির্বিঘ্নে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ইউনেস্কো (UNESCO) সদর দপ্তরে শেষ হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজত জয়ন্তীর দুই দিনের বিশেষ অনুষ্ঠান।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দূতাবাসের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ‘২৪ এর জুলাইয়ের ছাত্র-গণ আন্দোলনের অংশীজনের ব্যাপক উপস্থিতিতে ফ্যাসিস্টদের দেখা যায়নি ইউনেস্কো সদর দপ্তরের আশপাশে। যদিও আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা আশরাফুল ইসলাম সুকৌশলে অনুষ্ঠান স্থলে ঢুকে পড়লেও জনরোষের ভয়ে পালিয়ে যান।

এ প্রসঙ্গে আমার দেশ প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে দূতাবাসের সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ফ্রান্সে বসবাসরত পরাজিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান পণ্ড করার চক্রান্ত করে। কিন্তু, বিষয়টি জানতে পেরে দূতাবাসের পক্ষ থেকে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

বিষয়টি সম্পর্কে আগেই অবগত ছিলেন উল্লেখ্য করে ফ্রান্সে জুলাই আন্দোলনের এক সংগঠক বলেন, কিছুদিন আগে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ব্যক্তিগত সফরের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাকে হেনস্তা করে আওয়ামী বাকশালি দুর্বৃত্তরা। কিন্তু, তাদেরকে আর কোনো সুযোগ দেয়া হবে না।

জানা গেছে, অনুষ্ঠান ভণ্ডুল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগ ও তাদের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে নিজেদের সংগঠিত করে সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর উপর হামলার চক্রান্ত করছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসনামলে নিয়োজিত দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা ফ্যাসিস্টদের গুপ্তচর হিসেবে দূতাবাসের গোপন তথ্য ও বিভিন্ন কর্মসূচি ফ্রান্স আওয়ামী লীগ নেতাদের সরবরাহ করেন।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় প্যারিসে অবস্থিত জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো এ রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পর থেকে জাতিসংঘের সকল সদস্যদেশে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি।

রজতজয়ন্তীর মূল আলোচনা অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে ভার্চুয়ালি ভাষণ দেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোয় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি খন্দকার এম তালহা এবং সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাফিজা সাইমা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের ভাষাবিদ, ভাষা বিশেষজ্ঞ এবং ইউনেস্কোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

ভার্চুয়ালি ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস বলেন,২০২৪ এর ছাত্র- গণবিপ্লবের অনুপ্রেরণা ছিলো ‘৫২’র ভাষা আন্দোলন। তিনি বলেন, মানুষের পরিচয়ের মূলই হলো মাতৃভাষা। সবাইকে নিজের মাতৃভাষার গুরুত্ব বুঝতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের ইতিহাস, ভাষার শক্তির উপস্থাপনা, আমাদের ভাষা, এটি আপনাদের প্রত্যেককে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও তাদের অধিকার সম্পর্কে কথা বলতে বাধ্য করে। আমাদের বাংলাদেশে আমরা সামাজিক- সংস্কৃতির ভিন্নতাকে আমরা অন্তর থেকে লালন করি। কারণ আমাদের ভাষা এবং দেহ আমাদের ইতিহাসে আমাদের পরিচয়, বাংলাদেশে মাতৃভূমি রক্ষা করার জন্য আমরা মাতৃভাষাকে স্বীকৃতি দিয়ে এই বৈচিত্র্যকে সম্মান করে আসছি।

বৈচিত্র্যময় এবং বহুভাষিক শিক্ষা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি সাধারণীকরণের চেষ্টা করতে হবে, তেমনিভাবে সংলাপ এবং উদ্যোক্তাদের জন্য মাতৃভাষা প্রযুক্তি এখনই শুরু করতে হবে যাতে সমস্ত ভাষা এই স্থানটি খুঁজে পায় এবং এখানে একাডেমিকভাবে অবদান রাখতে পারে।

তিনি বলেন এটা করতে ব্যর্থ হলে থ্রি জিরো তত্ত্ব ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সম্ভব হবে না। কারণ, কাউকে পেছনে রেখে এগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে না।’

দূতাবাসের হেড অব চ্যান্সারি ওয়ালিদ বিন কাশেমের পরিচালনায় সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী । আরও অংশ নেন দূতাবাসের প্রতিরক্ষা সচিব ব্রিগেডিয়ার মিজানুর রহমান,কমার্শিয়াল কাউন্সিলর মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি প্রেমীরা উপস্থিত ছিলেন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি শিল্পীদের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১৩টি দেশের শিল্পীরা মনোজ্ঞ তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে লেখক-গবেষক বদরুদ্দীন উমর ও ভাষাসৈনিক তাহমিনা সালেহ্‌র ১৯৫২ ও ২০২৪ এর অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজতজয়ন্তী আয়োজনে শান্তির জন্য বহুভাষিক দৃষ্টিভঙ্গি, জরুরি পরিস্থিতিতে বহুভাষিক শিক্ষা এবং প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে বহুভাষিক শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত হয় ভাষাবিদ ও গবেষকদের সম্মেলন। সেখানে ভাষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও প্রসারের বিষয়ে আলোচনা করেন।

এছাড়া, গত ২৫ বছরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপনের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা ও নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর মাতৃভাষা-ভিত্তিক শিক্ষার গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করা হয়।

ইউনেস্কোর তথ্যানুযায়ী বর্তমান বিশ্বে আনুমানিক ৮৩২৪ টি ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাত হাজার ভাষা বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। আমাদের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে অনেক ভাষা দ্রুত গতিতে হারিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ সালে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে বসবাসরত দুই বাংলাদশী রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির আবেদন জানান এবং ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে জাতিসংঘে তাদের প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সমস্ত কৃতিত্ব জোর করে ছিনিয়ে নেয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ