রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন

ভারতে মুসলিমবিদ্বেষ বেড়েছে ৭৪ শতাংশ

রিপোটারের নাম / ১০১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ০৮

২০২৪ সালে ভারতে মুসলিমবিদ্বেষ বেড়েছে। বছরটিতে ভারতের সংখ্যালঘুদের প্রতি, বিশেষ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের (হেট স্পিস) ঘটনা ৭৪ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে গত বছর ভারতের জাতীয় নির্বাচনের সময় এ ধরনের ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়া হেট ল্যাব গত সোমবার তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালে ১ হাজার ১৬৫টি বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। তবে আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৬৬৮। রাজনৈতিক সমাবেশ, ধর্মীয় শোভাযাত্রা, প্রতিবাদ মিছিল এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মতো বিভিন্ন ইভেন্টে এই ধরনের বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইন্ডিয়া হেট ল্যাব জানিয়েছে, প্রতিবেদনে তারা জাতিসংঘের হেট স্পিসের সংজ্ঞা ব্যবহার করেছে। এটি এমন ভাষাকে বোঝায়, যা ধর্ম, জাতি, জাতীয়তা, বর্ণ বা লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ বা বৈষম্যমূলক মনোভাব প্রকাশ করে।

হেট ল্যাবের গবেষকদল জানান, ২০২৪ সালে ভারতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত সাত ধাপে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। এই নির্বাচনী বছরে ২০২৩ সালের তুলনায় বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ধরন থেকে আলাদা ছিল। অর্থাৎ নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও নেতারা নিজেদের সমর্থন বাড়াতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। এই প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে দেশটিতে মুসলিমবিদ্বেষ ছড়ানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।

প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হয়েছে, যখন কয়েক দিনের মধ্যে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো মোদি সরকারকে ভারতে সংখ্যালঘুর প্রতি অন্যায় আচরণের জন্য দায়ী বলে অভিযুক্ত করেছে।

মোদির সরকার ও তার দল বিজেপি ধর্মীয় কারণে বৈষম্যমূলক নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, খাদ্য ভর্তুকি প্রকল্প ও বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির বিষয়ে তাদের নীতিগুলো সব ধর্মের ভারতীয় নাগরিককে সুবিধা দিয়েছে।

ইন্ডিয়া হেট ল্যাব জানিয়েছে, গত বছরের এক-তৃতীয়াংশ মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য দেওয়া হয়েছে ১৬ মার্চ থেকে ১ জুনের মধ্যে, যা ছিল নির্বাচনী প্রচারের সবচেয়ে চূড়ান্ত সময়কাল। বিশেষ করে মে মাসে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

গবেষক দলটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এপ্রিল মাসের এক বক্তব্য উদ্ধৃত করেছে, যেখানে তিনি মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ ও ‘বেশি সন্তান জন্ম দেয়’ বলে মন্তব্য করেন।

মোদি টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে জয়ী হন এবং বিভাজন উসকে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয় এবং সরকার গঠনের জন্য জোট সঙ্গীদের ওপর নির্ভর করতে হয়।

ইন্ডিয়া হেট ল্যাব জানিয়েছে, গত বছর মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ৮০ শতাংশ ঘটনা বিজেপি ও তাদের মিত্রদের শাসিত রাজ্যগুলোতে সংঘটিত হয়েছে।

ইন্ডিয়া হেট ল্যাব নামের সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কাশ্মীরী সাংবাদিক রাকিব হামিদ নাইক। এটি সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেট নামক ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একটি প্রকল্প।

তবে বিজেপি বলেছে, সংস্থাটি ভারতের বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্ট চিত্র তুলে ধরে।

ভারতের সংখ্যালঘুদের দুরবস্থার বিষয়ে উল্লেখ করতে গিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা, ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব আইন, যাকে ‘মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক’ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ; ধর্মান্তর বিরোধী আইন, যা সংবিধান স্বীকৃত বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং ২০১৯ সালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিষয়গুলোর কথা তুলে ধরেন।

এ ছাড়া মানবাধিকার কর্মীরা মুসলিমদের মালিকানাধীন সম্পত্তি ধ্বংসের ঘটনা তুলে ধরেছেন, যেগুলোকে ভারত সরকার অবৈধ নির্মাণ বলে দাবি করেছিল এবং তারা হিজাব নিষিদ্ধ করার বিষয়ও তুলে ধরেন, বিজেপি শাসনামলে কর্ণাটকের স্কুল ইউনিফর্ম বিধির অধীনে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেখানে মুসলিম মেয়ে ও নারীদের পরিধেয় হিজাব শ্রেণিকক্ষে পরার অনুমতি বাতিল করা হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ