প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি এলে বারবার ভাষা সৈনিকদের কথা মনে পড়ে। কিন্তু দীর্ঘ ৭৩ বছরে লালমনিরহাটের তাদের কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা কোথাও সংরক্ষিত নেই। তবে ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা, জেলা প্রশাসন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর তথ্যমতে এ জেলায় ১২ জন ভাষা সৈনিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে জীবিত আছেন একমাত্র আবদুল কাদের ভাসানী আজও বেঁচে আছেন। বয়সের ভাড়ে নুয়ে পড়া এ ভাষা সৈনিকের শারীরিক অবস্থা এখন আর ভালো নেই। শরীরে বাসা বেধেছে বিভিন্ন রোগ-বালাই।
জানা গেছে, ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনে লালমনিরহাটের অনেক নারী ও পুরুষ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। ১২ জন ভাষা সৈনিক রয়েছেন উত্তরবঙ্গের এ জেলায়। তাদের মধ্যে তিনজন নারী ও নয়জন পুরুষ। তাদের মধ্যে প্রয়াত হলেন, ১১ জন প্রয়াত। তারা হলেন- আশরাফ আলী, ড. শাফিয়া খাতুন, মনিরুজ্জামান, আবদুল কুদ্দুছ, কমরেড শামসুল হক, মহেন্দ্রনাথ রায়, আবিদ আলী, জরিনা বেগম, জাহানারা বেগম (দুলু), কমরেড সিরাজুল ইসলাম ও জহির উদ্দিন আহম্মদ।
১৯৫২ লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় আবদুল কাদের ভাসানী ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতাল সমর্থনে তিনি এবং ভাষা সংগ্রাম পরিষদের কয়েকজন সদস্য লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে লালমনিরহাট থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের জন্য বিদ্যালয় গেটে আসেন। সেসময় প্রধান শিক্ষক পুলিশকে বিদ্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। এরপর পুলিশ বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যায়। পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে নতুন কৌশল বেছে নেন ছাত্রনেতারা। তারা বিদ্যালয়ের পিছনে সুইপার কলোনি দিয়ে পালিয়ে যান। পরে তাদেরকে পুলিশ কারণে-অকারণে আটকে রাখেন। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ আত্মগোপণে থেকে মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যান।
আবদুল কাদের ভাসানী বলেন, মাতৃভাষা দিবস এলে জেলা প্রশাসন খোঁজ খবর নেয়। রুটিন মাফিক একটি আমন্ত্রণ পত্র দেয়। ২১ ফেব্রুয়ারির দিন সংবর্ধনা প্রদান করে। এরপর আর কেউ কোনো খোঁজখবর রাখে না। জীবিত ভাষা সৈনিকের খবর নেই, যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারেরও খবর কে রাখবে।