ভুয়া ভোট ও রাতের ভোট ও ডামি ভোট হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের তিনটি নির্বাচনে যারা জেলা প্রশাসক হিসেবে রির্টানিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। এমন ২১ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে পাঠানো হয়েছে বৃহস্পতিবার। আগের দিন (বুধবার) আরও ৪৩ কর্মকর্তাকে করা হয়েছে ওএসডি। এর আগে অপর ১২ জনকে নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে ওএসডি করা হয়েছে।
এছাড়া, দুই সচিব ও এক অতিরিক্ত সচিবকেও বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার। এরা জুলাই অভ্যুত্থানের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন বলে তথ্য পেয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
শেখ হাসিনার ভুয়া নির্বাচনের অংশিদার হওয়ায় এ পর্যন্ত ৭৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো। এটি চলমান থাকবে বলেও জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মুখলেস উর রহমান।
জুলাই-আগস্ট বিল্পবের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসানকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে। অপর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট বিল্পবের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং অন্তর্বর্তী সরকারে বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালানো ও বিশোদ্গার করার অভিযোগে যুগ্ম-সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস-কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
অপর এক প্রজ্ঞাপনে হাসিনা সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগি অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। তাঁর স্বামী মনিরুল ইসলাম জুলাই গণআন্দোলন চলাকালে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি)প্রধান ছিলেন। গণহত্যার অভিযোগ মাথায় তিনি তিনি মনিরুল ইসলাম এখন পলাতক রয়েছেন।
অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারা হলেন বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহাম্মদ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার, পরীবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. সুবাস চন্দ্র বিশ্বাস, ওসডি’তে থাকা অতিরিক্ত সচিব রাব্বী মিয়া, ভূমি সংস্কার বোর্ডের সদস্য উম্মে সালমা তানজিয়া, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম প্রমুখ।
ভুয়া ভোট ও রাতের নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত থাকা কর্মকর্তাদের অবসরে পাঠানোর বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘বিতর্কিত নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন এবং যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম তাদের ওএসডি করা হচ্ছে। এছাড়া ২৫ বছরের বেশি চাকরি করেছেন যেসব কর্মকর্তা তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে। এর আগেও দুই দফায় ৫৫ জনকে ওএসডি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ড. মুখলেস সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনকে কেউ বলে ভুয়া ভোট, কেউ বলে রাতের ভোট আবার কেউ বলে অগ্রহণযোগ্য ভোট। আমরা যে নামেই ডাকি ওই নির্বাচনগুলো আসলে কোনো নির্বাচনই ছিল না। এগুলো প্রহসনের নির্বাচন ও জাতির সঙ্গে তামাশা মাত্র। ওই সময়ের সরকার এদের সহায়তা নিয়ে নির্বানগুলো করেছিল। পুরো বিশ্ব নির্বাচনগুলোকে ভুয়া বললেও এরা কেউই কোনো আপত্তি করেননি। সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম এগুলো নিয়ে কাজ করছে। এমন আরও যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সিনিয়র সচিব ড. মুখলেস।