মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন

ভোট সামনে রেখে দল গোছাচ্ছে বিএনপি

রিপোটারের নাম / ৭৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

জাহিদুল ইসলাম
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৪১
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ০৮

চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী জানুয়ারি মাসে ভোটের আয়োজন মাথায় রেখে দলকে আরও শক্তিশালী করার কথা ভাবছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। একইসঙ্গে ত্রয়োদশ নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দলটি। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। জনশক্তির মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনা ও জনগণের সঙ্গে তাদের সংযোগ ঘটাতে ৩১ দফাকে নিয়ে সারা দেশে কর্মশালা চলছে।

এরই মধ্যে ৬৪ জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে সূচিও প্রকাশ করেছে বিএনপি। এসব সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন। সমাবেশগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং পতিত ফ্যাসিবাদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলার বিষয় অগ্রাধিকার পাবে।

অন্যদিকে ত্রয়োদশ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে বিএনপি। এবারের নির্বাচনে তরুণ, অভিজ্ঞ ও প্রবীণদের সমন্বয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা সাজানো হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন-সংগ্রামে যেসব দল ও জোট অংশ নিয়েছে, তাদের নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তা রয়েছে বিএনপির। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের ২২ অক্টোবর প্রাথমিকভাবে সমমনা শরিক জোটের ছয় নেতাকে নিজ এলাকায় জনসংযোগে সহযোগিতা করার জন্য দলের সংশ্লিষ্ট ছয় জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ‘অতীব জরুরি’ নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয় দলটি। তবে এ চিঠির ঘটনায় তৃণমূলে ভুল বোঝাবুঝির পরিপ্রেক্ষিতে পরে কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই চিঠি ধানের শীষের চূড়ান্ত মনোনয়ন নয়।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি দেখেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের কার্যক্রম জনসম্মুখে তুলে ধরবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দলটি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতিত শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করলেও নির্বাচনের মাঠে অনেক চ্যালেঞ্জ দেখছে তারা। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী তালিকা তৈরিতে ১৬ বছরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ত্যাগী নেতারা মূল্যায়িত হবেন। সে সঙ্গে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়া জনপ্রিয় প্রার্থীদের মূল্যায়নও করা হবে বলে জানা গেছে।

রাজনীতির মাঠে নির্বাচনের উত্তেজনার মধ্যে গত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এমএম নাসিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠকে বর্তমান কমিশন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি কতটুকু নিয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান জানান, নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় কমিশন তাদের প্রস্তুতি জানালে বিএনপি তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।

এদিকে নির্বাচনের মাঠে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময় থেকে প্রতিটি সভা-সমাবেশ ও দলীয় ফোরামে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলে যাচ্ছেন—আসছে নির্বাচন বিএনপির জন্য সহজ হবে না; দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। এমন বক্তব্যে ধারণা করা হচ্ছে দলের ভেতরে শক্তভাবে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি সারছে বিএনপি।

দলটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী তালিকায় ১৯৯১, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। তার মধ্য ১৯৯১ সাল ও ২০০৮ সালের প্রার্থী তালিকা বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হবে। কারণ এ দুটি নির্বাচনে দলটি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এছাড়া ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের জনপ্রিয়তাও যাচাই-বাছাই করা হবে।

এদিকে দলকে তৃণমূলে শক্তিশালী করতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জেলা কমিটি করতে নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। সে লক্ষ্যে সব জেলায় চলছে কাউন্সিল। এছাড়া সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে মাঠে নামছেন বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

দলটির নেতাদের জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর ধারাবাহিকতায় কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে অভিযুক্ত নেতার পদবি স্থগিত করা, পদাবনতি ঘটানো, এমনকি বহিষ্কারের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নিতে দেখা গেছে। দলটি ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর গত ছয় মাসে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৭০০’র বেশি নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে। দলটির দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগে আরও প্রায় ৬ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারেক রহমানের হাতে।

দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সৎ, যোগ্য ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী পেতে এখন থেকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকবেন। নেতাকর্মীর নামে অভিযোগ, গণমাধ্যমের খবর, দলের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া, মাঠের গ্রহণযোগ্যতা, দলের প্রতি আনুগত্য ও জনগণের সঙ্গে কার কতটুকু সম্পর্ক রয়েছে, তা বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রস্তুতি যতটাই হোক না কেন, আমরা চাই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের জন্য আমাদের দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি তো আছেই। নতুন করে প্রস্তুতির কোনো প্রয়োজন নেই। শিডিউল ঘোষণা হোক, আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব। দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আমার দেশকে বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। দলটির রাজনীতি, আন্দোলন-সংগ্রাম ও সংগঠন পরিচালনা করে নির্বাচন করার জন্য। ফলে নির্বাচনের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু নেই।

বিএনপিকে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের বাইরে রেখেছে দাবি করে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ শাসনের কারণে দেশে রাজনীতি ছিল না। তারপরও বিএনপিকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ভাঙতে পারেনি। এ সময় শত নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে বিএনপি এক ছিল। সে জন্য ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে নতুন যাত্রা শুরু করেছি। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হবে। আমরা সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ মুহূর্তে নির্বাচন হলে বিএনপি সর্বাত্মক প্রস্তুতিতে রয়েছে।

প্রার্থী বিবেচনায় বিএনপির কৌশল সম্পর্কে সালেহ এমরান প্রিন্স বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। সে ক্ষেত্রে অনেকে প্রার্থী হতে চান। এ ক্ষেত্রে দল প্রথমে যেসব প্রার্থীর জনগণের সঙ্গে বেশি সম্পর্ক থাকবে, তাকে মূল্যায়ন করবে। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদ আন্দোলনে ভূমিকা, দলের দুর্দিনে ত্যাগ ও দলের প্রতি আনুগত্য রয়েছে— এমন ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করবে। একইসঙ্গে যাদের মধ্যে জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিচক্ষণতা আছে, তাদের বিবেচনা করবে দল।

তরুণ-প্রবীণ সমন্বয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে জানিয়ে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএনপিকে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনের বাইরে রেখেছে। ফলে এবারের নির্বাচনে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আমার দেশকে বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মী জেলখানায় ও ফেরারি জীবন পার করেছেন। এমন দুঃসময়েও আমরা প্রতিনিয়ত জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। এমনকি জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের জন্য। ফলে আমরা সব সময় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে থাকি।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা বেগম আমার দেশকে বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। যে কোনো সময় নির্বাচন হলে বিএনপির প্রস্তুতি আছে। আমাদের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় কাজ করছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ