‘কে ঐ শোনালো মোরে আযানের ধ্বনি, মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিলো কি সুমধুৃর, আকুল হইলো প্রাণ, নাচিলো ধ্বমনি। কি-মধুর আযানের ধ্বণি’।
সেই বিখ্যাত ‘আযান” কবিতার রচয়িতা মহাকবি কায়কোবাদ-এর ১৬৮তম জন্মজয়ন্তী আজ ২৫ ফ্রেবুয়ারি। মহাশশ্মান প্রণেতা এই কবি ১৮৫৭ খ্র্রি ২৫ ফ্রেবুয়ারি আজকের এই দিনে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবি’র জন্মজয়ন্তীতে আজ মঙ্গলবার সকাল ‘মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি সংসদ’ এর পক্ষ থেকে কবির সমাধিস্থল ঢাকার আজিমপুর পুরোনো কবরস্থানে কবর জিয়ারত করা হবে। এছাড়া এ বছর নবাবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কবির জন্মদিনে আলোচনা সভা ও কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করেছে ‘কায়কোবাদ ডট কম’ কায়কোবাদকে জানুন সংগঠনটি। ‘মহাকবি কায়কোবাদ স্মৃতি সংসদ’র সদস্য, ইতালী প্রবাসী বিষ্ণুপদ সাহা জানান, কবি’র এলাকায় আমার বাড়ি। তাই ছোটবেলা থেকে তার প্রতি আমার বিশেষ টান। প্রবাসে থাকলেও প্রতি বছরই কবির জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী শ্রদ্ধার সাথে পালনের চেষ্টা করি। সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বছর কবির স্মৃতির উদ্দেশ্যে গুণিজন সম্মাননা ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। কবি, ১৯০৪ সালে অমর কাব্য গ্রন্থ মহাশশ্মান লিখে মহাকবি উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। এই রকম অসংখ্য কবিতাসহ আধুনিক শুদ্ধ বাংলায় গীতিকাব্য, কাহিনি কাব্য, কাব্য উপন্যাস রচনা করে গেছেন তিনি।
তিনি ছিলেন খাঁটি বাঙালি এবং মুসলমান। ১৮৫৭ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৯৪ বৎসর পর্যন্ত তিনি বেঁচে ছিলেন। জীবনের সুদীর্ঘ ৮২ বছরই তিনি বাংলা সাহিত্য নিয়ে চর্চা করেছেন। কবি মাত্র ১২ বৎসর বয়সে প্রথম কাব্যগ্রন্থ বিরহ বিলাপ প্রকাশিত হয় ১৮৭০ সালে। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ কুসুম কাননে, প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ সালে। এ দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের পর পরই তিনি কবি হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন। ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ অশ্রুমালা। এ অশ্রুমালা প্রকাশের পর থেকেই কায়কোবাদ সাহিত্য সমাজে প্রতিষ্ঠিত হন। কবি নবীন চন্দ্র সেন, সম্পাদক বঙ্গবাসী, ঢাকা গেজেট ও কলকাতা গেজেট অশ্রুমালায় ভূয়সী প্রশংসা করেন। এরপর তিনি শিব মন্দির, অমিয় ধারা, মহরম শরীফ বা আত্মবিসর্জন কাব্য, শশ্মান ভষ্ম তাঁর জীবদ্দশায় এ সকল গ্রন্থ প্রকাশ হয়ে থাকে। কবির মৃত্যুর পর প্রকাশ হয় প্রেমের ফুল, প্রেমের রানী, প্রেম পারিজাত, মন্দাকিনি ধারা ও গাউছ পাকের প্রেমের কুঞ্জ। এমনিভাবে কবির মোট ১৩টি কাব্যগ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে উপহার রেখে গেছেন। কথিত আছে, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর কবির বেশ কিছু পাণ্ডুলিপি তার বংশধরদের মধ্য থেকে হাতছাড়া হয়ে যায়। তা আর ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়নি।
ফিরে পাওয়া গেলে নিশ্চয়ই বাংলা সাহিত্যের জন্য বাংলা ভাষাভাষীর জন্য অনেক উপকারে আসত। মহাকবি ১৯৫১ সালে ২১ জুলাই বার্ধক্য জনিত কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। পুরাতন আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।