সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৯ অপরাহ্ন

রফিককে গুলির পর উল্লাস করে লাশ নিয়ে যায় পুলিশ

রিপোটারের নাম / ৫৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫

কে এম সাঈদ, নাজিরপুর (পিরোজপুর)
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০: ৫০

২০২৪ সালের ১৯ জুলাই। মসজিদে নামাজ পড়তে যান রফিকুল ইসলাম রফিক। কিন্তু নামাজ পড়া শেষ হলেও আর ঘরে ফেরা হয়নি তার। ছেলে আন্দোলনে যাওয়ায় বাবা রফিককে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর ধরে নিয়ে যায় যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। তারা এলোপাতাড়ি শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় রফিককে। পরে আশ্রয় চাইতে গেলে বুকে ও মাথায় গুলি চালিয়ে রফিকের মৃত্যু নিশ্চিত করে পুলিশ।

শহীদ রফিকুল ইসলাম পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার সাতকাছিমা গ্রামের বাসিন্দা। নাজিরপুর শহীদ জিয়া কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন রফিক। ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে জীবিকার অন্বেষণে ঢাকায় চলে আসেন। রফিক তার স্ত্রী ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। ঢাকায় নিজের ছেলের নামে রাইয়ান কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার দিয়েছেন। ব্যবসার পাশাপাশি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন রফিক। ছেলে রাইয়ান বর্তমানে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসায় আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হলে যুবলীগের সন্ত্রাসীরা রফিককে ধরে নিয়ে যায়। রাস্তার ওপর ফেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি তাকে কোপাতে শুরু করে। এ সময় পুলিশের কাছে রফিক আর্তনাদ করে আশ্রয় চান। কিন্তু পুলিশ তাকে আশ্রয় না দিয়ে বুকে ও মাথায় গুলি করে উল্লাস করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রফিকের লাশ তাদের ভ্যানে করে নিয়ে যায় পুলিশ।

মাদরাসায় পড়ুয়া একমাত্র ছেলে রাইয়ান আমার দেশকে বলেন, গোলাপবাগ জামে মসজিদে এশার নামাজ আদায় করতে যান বাবা। রাত সাড়ে ১০টায় তার খুবই কাছের বন্ধু আবুল কালাম কাকা বাবাকে মুঠোফোনে না পেয়ে আমাকে কল দিয়ে খোঁজখবর জানতে চান। এ সময় বাবার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চান তিনি। আমি আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে মতিঝিল এলাকায় ছিলাম। সেখানে বসে বাবার মুঠোফোনে বারবার ফোন দিয়েও না পেয়ে গোলাপবাগের বাসায় যাই।

বাসায় পৌঁছালে মা নারজিয়া বেগম ছেলে রাইয়ানকে বলেন, ‘তোমার বাবার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।’ পরে মা-ছেলে মিলে ওই রাতে গোলাপবাগ এলাকার সম্ভাব্য স্থানে খোঁজখবর নেন তারা। পরের দিন ঢাকার সবগুলো থানায় ছবি হাতে নিয়ে সন্ধান করতে থাকেন। একই সঙ্গে র‌্যাবের ইউনিটেও সন্ধান করেন রাইয়ান।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে কোনো তথ্য না পেয়ে মাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে থাকেন তারা। হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খুঁজে না পেয়ে ছুটে যান মর্গে। বাবাকে খুঁজতে গিয়ে পুলিশের হাতে মারও পর্যন্ত খেতে হয়েছে রাইয়ানকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের পাশে পুলিশি মারধরের শিকার হন রাইয়ান।

পরে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও বাবাকে না পেয়ে ৯ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা মেডিকেল কলেজে যান রাইয়ান ও তার মা। সেখানে পাঁচ শতাধিক লাশ থাকলেও বাবার কোনো খোঁজ পাননি রাইয়ান। পরে ঢামেক কর্তৃপক্ষের কথায় ছুটে যান আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে। সেখানে গিয়ে রফিকের ছবি দেখতে পান তারা। জানতে পারেন ২৪ জুলাই রফিকের লাশ ঢাকা মেডিকেল থেকে রায়েরবাজার বদ্ধভূমি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে গেলেও রফিকের লাশের সন্ধান দেয়নি। ১৯ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত এই ১৮ দিন বহু খোঁজাখুঁজি করেও রফিকের সন্ধান পায়নি পরিবার। স্বামীর খোঁজে নারজিয়া আর বাবার খোঁজে রাইয়ান অনাহারে অর্ধাহারে কাটিয়েছে বহু দিন-রাত। রফিকের মৃত্যুতে সংসারের অচলাবস্থা। বর্তমানে তাদের সংসারে নেই উপার্জনক্ষম কেউ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ