রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য মতবিরোধে রূপ না নিতে সতর্ক করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
চব্বিশের বিপ্লবের নতুন বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনা ধরা দিয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু সেই মতপার্থক্য যেন মতবিরোধে রূপ না নেয়। নতুন বাংলাদেশ গড়ার মত জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ইফতার মাহফিলের সঞ্চালনা করেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, ছাত্র ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, আলেম-ওলামা, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন।
রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ্য করে জামায়াত আমির বলেন, আমরা যার যার নীতি-পলিসি ও দেশ গড়ার স্বপ্ন তুলে ধরব। জাতি যাদের পলিসি পছন্দ করবে তাদের হতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেবে।
তিনি বলেন, মৌলিক সংস্কারের জন্য আমরা বর্তমান সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। সরকারকে এ বিষয়ে আরো স্পষ্ট করতে হবে, যাতে সবাই নির্বাচনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারে। আগামীতে জঞ্জালমুক্ত সমাজ সাজাতে রাজনৈতিদ দল ও জোটগুলো যেন কাজ করে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
চব্বিশের বিপ্লবে যাদের ত্যাগ ও জীবনের বিনিময়ে জাতি একটি নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছে তাদের এবং আহত ও পঙ্গুদের স্মরণ ও সুস্থতা কামনা করেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার এক এক করে ৫৩টি বছর কেটে গেছে। ক্ষমতার অনেক হাত বদল হয়েছে। কিন্তু সবাই বলে-স্বাধীনতার সেই লক্ষ্য আমরা পূরণ করতে সক্ষমত হইনি। এর কারণ হলো-আমরা প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিকে এক জায়গায় মেলাতে পারিনি। একটি ন্যায়-ইনসাফের বাংলাদেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, নিরাপত্তার বাংলাদেশ-এতটুকুই চাওয়া ছিল, কিন্তু তা পূরণ হয়নি।
তিনি বলেন, যুগযুগ ধরে অন্যায়, অপকর্ম ও জুলুম চলে আসছে। কখনো কম, কখনো বেশি হয়েছে, জুলুম একেবারে বন্ধ হয়নি। জুলুমের শিকার ৮ বছরের শিশু মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশের জন্য লজ্জা জানিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, দেশে শিক্ষিত মানুষের অভাব নেই, কিন্তু নৈতিক শিক্ষার অভাবে এই অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। আগামীর বাংলাদেশ যেন নৈতিক শিক্ষার বাংলাদেশ হয় এবং প্রত্যেকটা মানুষের হাত যেন দেশ গড়ার হাত হয় সেই প্রত্যাশা করেন তিনি।
জামায়াত আমীর বলেন, যে জাতি যত উন্নত হয়েছে, তারা শিক্ষা দিয়েই উন্নত হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এবং আমাদের দল বিশ্বাস করে, শিক্ষাকে যদি তার নৈতিক ভিত্তির ওপর সর্বাধিক মানবিক এবং জাগতিক উৎকর্ষ দিয়ে গড়ে তোলা যায় তাহলেই কেবল সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় জামায়াতের ওপর জুলুম-নির্যাতন প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গত বছর রমজানে সোনারগাঁও হোটের কর্তৃপক্ষের পরামর্শে কোন ব্যানার ছাড়াই একটি ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েকঘন্টা আগে সেটি বন্ধ করার জন্য চাপ দেয় পুলিশ। বিচারের নামে জুলুম করে সাবেক আমির সহ ৫জন নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আরো ৬ জনের প্রাণ গেছে। একজন নেতা এটিএম আজহার এখনো জেলে আছেন। আইনের প্যাচ দেখিয়ে কেন মুক্তি বিলম্ব করা হচ্ছে? যাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে, তাদের একজনও যেন জেলে না থাকেন সেই দাবি করেন তিনি।
জামায়াত আমীর বলেন, জামায়াতের শত শত নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। থানায় নিয়ে গুলি করে পা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য তছনছ করা হয়েছে। বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে যারা ছিল তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হয়নি। কোটি কোটি মানুষকে জেলে পাঠানো হয়েছে। সেই আওয়ামী জাহেলিয়াত যেন আবার বাংলাদেশে ফিরে না আসে।
আওয়ামী লীগের পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা কথায় কথায় অমুক দেশে তমুক দেশে পাঠানোর কথা বলত, তারাই আজ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। যাদের দেশের প্রতি ভালবাসা ও দায় আছে, তারা দেশ ছেড়ে পালায় না। আমাদের পালানোর প্রশ্নই আসে না।