অমর একুশে বইমেলায় এখন শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে বই দেখছে তারা। তাদের পছন্দের বই কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশুচত্বরে শিশুদের বই দিয়ে জানানো স্টলগুলোর বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গতকাল সোমবার সরেজমিন বিভিন্ন স্টল ঘুরে বিক্রয়কর্মী এবং শিশু-কিশোর পাঠকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ভৌতিক, অ্যাডভেঞ্চার, বিজ্ঞান প্রজেক্ট এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বই।
ধানমন্ডি থেকে আসা কিশোর রবিন আমার দেশকে জানায়, সে বিজ্ঞান বাক্স এবং অ্যাডভেঞ্চারবিষয়ক পাঁচটি বই কিনেছে। ভূতের বই পড়তেও তার ভালো লাগে। আরো কয়েকবার সে মেলায় আসবে এবং তখন সে অনেকগুলো ভূতের বই কিনবে বলেও জানাল সে।
ছোটদের জ্ঞানবিজ্ঞান একাডেমির বিক্রয়কর্মী আলমিনা আমার দেশকে বলেন, এবার তাদের স্টলে বেশি বিক্রি হচ্ছে আলী ইমামের লেখা ‘স্কুলের ফাঁকে বিজ্ঞান প্রজেক্ট,’ ‘বিজ্ঞানের প্রজেক্ট বানাও, নিজে নিজে বিজ্ঞানী হও’। এ ছাড়াও কিশোর বয়সীদের উপযোগী এ লেখকের লেখা বিজ্ঞানের ৫০০ প্রশ্নের উত্তর ও ব্যাখ্যা’ বই অনেক বিক্রি হচ্ছে। এ লেখকের বইগুলোর দাম ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
জনপ্রিয় লেখক রকিব হাসানের কিশোর, মুসা, রবিনÑএ তিন গোয়েন্দার ‘অ্যাডভেঞ্জার ও গোয়েন্দা’, ‘রহস্য রোমাঞ্চ ও অ্যাডভেঞ্চার বই দুটির বিক্রি ভালো। দাম ২২৫ টাকা। ইঞ্জিনিয়ার রকিবুর রহমান খান (রূপক)-এর লেখা ‘ছোটদের মহাকাশ ও বিজ্ঞান’ বই দেখা এবং কেনার প্রতি শিশুদের আগ্রহ বেশি থাকে।
মালিবাগ থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে মেলায় আসা সাত বছর বয়সি রুফাইফি জানায়, তার ভূতের বই পড়তে ভালো লাগে। সে মেলা থেকে অনেকগুলো ভূতের বই কিনবে। তাছাড়াও মেলায় শিশুরা পাঠকদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। শিশুরা ছবি নির্ভর কালারফুল বই পছন্দ করে। তাদের চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে স্টলগুলোর ডিসপ্লেতে সে রকম বই দিয়েই সাজানো হয়।
গতকাল ছিল মেলার দশম দিন। ৮৪টি নতুন বই জমা পড়ে। নবম দিন জমা পড়েছিল ৯৭টি। গত ১০ দিনে মোট জমা পড়া নতুন বইয়ের সংখ্যা ৭৩৭টি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিকাল ৪টায় সূচনা সংগীত দিয়ে শুরু হয়। মনসুর মুসার সভাপতিত্বে মনিরুজ্জামানকে স্মরণ করে আলোচনা করেন সালমা নাসরীন ও মামুন অর রশীদ। এতে প্রবন্ধ পাঠ করেন মাশরুর ইমতিয়াজ।
চিলড্রেন হ্যাভেন পাবলিকেশন্স এ শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা বিজ্ঞানভিত্তিক বইগুলোর বিক্রি বেশি। এর মধ্যে পীযুষ কুমার বণিকের লেখা ‘প্রশ্নোত্তরে জ্ঞানবিজ্ঞান’, তুষার আহমেদের সম্পাদনায় ‘দুই বাংলার নির্বাচিত সেরা ভূতের গল্প’ গাজী প্রকাশনীর ‘সোনামণির ভালো অভ্যাস’ বইটি অনেক বিক্রি হচ্ছে।
শিশুরাজ্যের প্রকাশক আব্বাস খান আমার দেশকে বলেন, শিশু-কিশোর পাঠকের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে গোয়েন্দা কাহিনী, ভূত এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বই। তিনি আরো জানান, তার স্টলে বাচ্চাদের উপহার সামগ্রী নির্ভর বইয়ের বিক্রি ভালো। ফ্লাশ গার্ড এবং ফিনিক্সের বইগুলোর বিক্রিও ভালো। পঙ্খিরাজ স্টলের বিক্রয়কর্মী সাগর তালুকদার জানান, এবারের মেলায় সাইন্স ফিকশন ও ভূতের বইয়ের চাহিদা বেশি। জুবাইর জসীমের ‘ভূত-পরীদের গল্প’ আখতারুল ইসলামের সায়েন্স ফিকশন ‘নীল গ্রহ লাল আকাশ’ ইউনুস আহমেদের ‘ভিন গ্রহের রূপকথা’ বইটি ভালো চলছে। ফারজানা তানিয়ার ‘রাখাল ও ডাইনি বুড়ি’, অপু বড়ুয়ার ‘তিন পরি ও নীল পাহাড়’, সৈয়দ আবু সুফিয়ানের ‘ভূতের বাড়ি’ ও মাহবুব লাভলুর ‘টাইগার কবিরাজ’ বইটির বিক্রিও ভালো।
জলপরী স্টলে বসা লেখক সাফিয়া খন্দকার রেখা জানান, মেলায় তার ‘রোল নাম্বার ওয়ান’ ও ‘গল্পে শিখি শব্দ গঠন’ বই অনেক বিক্রি হচ্ছে। এ স্টলের নতুন বই ‘ইলিশখেকো ভূত’ বইটি পাঠক চাহিদার শীর্ষে রয়েছে।