সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৯ অপরাহ্ন

‘সন্তানের লাশ কাঁধে নেব তা কখনো ভাবিনি’

রিপোটারের নাম / ৭৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মো. সিরাজুল ইসলাম, শিবচর (মাদারীপুর)
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯: ৫৪

২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে শহীদ হন মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বাসিন্দা হৃদয় হোসেন (১৭)। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত ১৯ জুলাই ঢাকার বাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন পরিবারের একমাত্র ছেলে।

বাবা শাহ আলম হাওলাদার বলেন, করোনার কারণে আমার একমাত্র ছেলে হৃদয়ের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। পরে সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে বাড্ডার লিংক রোডে আমার ফুপাতো ভাই মনির হোসেন মোল্লার কারখানায় কাজে দিই এবং সেখানে প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করছিল সে। বেতনের থেকে নিজের খরচের টাকাটা রেখে বাকিটা বাড়ি পাঠিয়ে দিত।

‘আমার সেই ছেলে আর আর বাড়ি ফিরবে না, ডাকবে না বাবা বলে।’ এই কথা বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন বাবা শাহ আলম। বিচার চান ছেলে হত্যার।

শাহ আলম হাওলাদার বলেন, ‘আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল? ওরে কেন গুলি কইরা মারল? বাবা হয়ে সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়ার কষ্ট কাউকে বলে বুঝাতে পারব না। সন্তানের লাশ কাঁধে নেব, তা কখনো ভাবিনি। কিন্তু কেন আমার সন্তান গুলিতে মারা গেল। তার কি কোনো বিচার পাব না?’

ঘটনার বিবরণ দিয়ে মনির হোসেন মোল্লা বলেন, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করে পাশের মেসে খেতে যায় হৃদয়। খাবার শেষে কারখানায় ফেরার সময় রাস্তা পার হতে গেলে দেখে টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় রাস্তা আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচ্ছন্ন ধোঁয়ার মাঝেই হঠাৎ একটি গুলি বুক দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়।

মনির হোসেন বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায়ই সে তার পরা শার্ট খুলে গুলিবিদ্ধ স্থান বেঁধে রক্ত থামানোর চেষ্টা করতে থাকে। এমন সময় হৃদয়ের পরিচিত কেউ গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরটি আমায় জানায়। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীরা তাকে পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে আমি তাকে সেখান থেকে নিয়ে আফতাবনগরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এরই মধ্যে খবর পেয়ে মগবাজারে থাকা হৃদয়ের বাবা শাহ আলম হাওলাদার হসপিটালে চলে আসেন। আর বাবার কাঁধে ওঠে ছেলের লাশ। এরপর কখনো কাঁধে, কখনো রিকশায় এবং সবশেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে তার লাশ রাতেই গ্রামের বাড়ি শিবচরের সন্ন্যাসীর চর ইউনিয়নের রাজার চরে নিয়ে আসেন বাবা শাহ আলম। পরদিন জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে শহীদ হৃদয়ের লাশ দাফন করা হয়।

দাদা রফিক হাওলাদার বলেন, আমার নাতি হৃদয় হোসেনের আত্মত্যাগে জুলাই বিপ্লবে গতি এলেও তার পরিবার এখন গতিহীন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পরিবার এখন দিশাহারা। এখনো তার বাবার মানসিক অবস্থা অস্বাভাবিক। এ কারণে চালকের চাকরিও তাকে ছাড়তে হয়েছে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় চলছে তাদের পরিবার। এভাবে কতদিন চলতে পারবে আল্লাহই ভালো জানেন।

রফিক হাওলাদার জানান, রাজনৈতিক ও অন্য অনেক নেতা হৃদয়দের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু কারও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে শিবচর উপজেলা প্রশাসন থেকে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম নগদ ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। তাছাড়া জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে গত ডিসেম্বরে কল করে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা নাছিমা আক্তার বলেন, হৃদয় হোসেনের স্মৃতি যেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষের মাঝে বেঁচে থাকে এ জন্য তার নামে শিবচরে যে কোনো স্থাপনা বা সড়কের নামকরণ করলে আমরা একটু শান্তি পেতাম, কিছুটা স্বস্তি পেতাম। তাই আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তা বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ