২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে লাশ ফেলার মাস্টারমাইন্ড পলাতক পুলিশ কর্মকর্তারা দেশে ও দেশের বাইরে থেকে অন্তর্বতীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। একই সাথে এ সব পুলিশ কর্মকর্তারা আড়ালে থেকে নানাভাবে পুলিশ বাহিনীকে দুর্বল করতে ষড়যন্ত্র করছে। বর্তমান সরকারের ছয় মাস হলেও ছাত্র-জনতার হত্যার সাথে জড়িত পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেফতারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরের জোর উদ্যোগ না থাকায় এরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে পলাতক পুলিশ কর্মকর্তারা। বহুলআলোচিত সাবেক আইজিপি বেনজীর আহম্মেদের টেলিফোনের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। লাশ ফেলার মাস্টারমাইন্ড পলাতক শীর্ষ কর্তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সম্প্রতি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা এখন আর পুলিশ বাহিনীতে নেই, তারা এখন সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সদর দফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, বিগত সময়ে যে সব পুলিশ কর্মকর্তা অবৈধ ক্ষমতা ব্যবহার করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তারাই এখন নেপথ্যে থেকে পুলিশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছেন। নেপথ্যে থেকে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অনেকেই মোটা অংকের টাকা খরচ করছে পুলিশের মনোবল দুর্বল করতে। পুলিশের পলাতক শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার ও বিচার এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি যখন জোরালো হচ্ছে তখন ওইসব পলাতক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অপকর্মের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা সারাদেশের পুলিশ সদস্যদেরকে বিভ্রান্ত করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থেকে পলাতক পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের সহযোগিদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছে। ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব এই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের জনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত না হয়ে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক এটাই জনগণের প্রত্যাশা।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পতনের পর পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল পুলিশের বিশেষ শাখার সাবেক প্রধান মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। তিনি ১৩ আগস্ট, অন্তর্বতী সরকারের দ্বারা বাধ্যতামূলক অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু হঠাৎ করে ডিসেম্বর মাসে তিনি নিজের ফেসবুক আই ডি থেকে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে শুরু করেন। মনিরুল ইসলাম ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের বিকল্প ‘জয় বাংলা’এই মন্তব্য করে তার পোস্টে এটি প্রচার করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে নানা রাজনৈতিক ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও সক্রিয় হন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ধর্মীয় অনুসারীদের জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে পীড়ন চালাতেন। এছাড়া, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং তার অধীনস্থ কর্মকর্তারা জুলাই-আগস্ট মাসে রাজধানীকে একটি হত্যাযজ্ঞের ক্ষেত্র বানিয়েছিলেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক ডিআইজি সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান, সাবেক ডিআইজি ইমাম হোসেন, নুরে আলম মিনা, আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন, ফরিদ উদ্দিন, এসপি কাজী আশরাফুল আজিম, আরাফাত, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি বিপ্লব কুমার সরকার ও প্রলয় কুমার জোয়ারদার, সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মেহেদী হাসান, খন্দকার নুরুন্নবী ও সঞ্জিত কুমার রায় প্রমুখ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় আট শ পুলিশ সদস্য এখনো কাজে যোগদান করেননি। কয়েক দফায় তাদের কাজে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হলেও কোনো হদিস নেই এসব সদস্যের। তারা কোথায় আছেন, সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ইনকিলাবকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকা পলাতক পুলিশ কর্মকর্তাদের বিষয়টি আমরা নজরে রয়েছে। এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। যাদের খুঁজে পাচ্ছি, তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।