ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় কোনো সরকারব্যবস্থা ছিল না। বরং এক ডাকাতের পরিবার সে সময় চেপে বসেছিল। গতকাল সোমবার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ড. ইউনূস বলেন, ‘হাসিনার শাসনে কোনো সরকার ছিল না। এটি ছিল এক ডাকাত পরিবারের শাসন। সরদারের কাছ থেকে শুধু আদেশ হতো আর তা পালন হয়ে যেত। কেউ কোনো সমস্যা করলে তাকে গুম করে ফেলা হতো। নির্বাচন করা হলে জয় নিশ্চিত করা হতো। কেউ অর্থ চাইলে ব্যাংক থেকে লাখ লাখ ডলার ঋণের মাধ্যমে নিয়ে নেওয়া হতো এবং তা আর কখনোই দেওয়া লাগতো না।’
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশের যে ক্ষতি করেছেন, তার কোনো তুলনা নেই। গাজার মতোই বাংলাদেশ এক বিধ্বস্ত দেশ ছিল। শুধু তফাৎ ছিল এখানে কোনো ভবন ধ্বংস হয়নি। বরং পুরো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা, নীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধ্বংস করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জনগণের অর্থলুট করতে ব্যাংকগুলোকে সম্পূর্ণ লাইসেন্স দেওয়া ছিল। তারা তাদের কর্মকর্তাদের বন্দুক নিয়ে পাঠাতো সব লুটে নিতে।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের জেরে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। এর তিনদিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য গঠিত সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সরকার পতনের পরপরই শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। গার্ডিয়ানকে সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনাকে দিল্লি আশ্রয় দিয়ে রেখেছে, তা সহনীয় হতে পারে। কিন্তু ভারতকে প্ল্যাটফরম হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশের পরিবর্তনকে হাসিনার উল্টে দেওয়ার চেষ্টা ভয়াবহ। এটি দেশকে অস্থিতিশীল করবে।
দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হাসিনার শাসনের চেয়ে পরিস্থিতি অনেক উন্নতি করেছে।
গত সপ্তাহে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক বক্তব্যে বলেছিলেন, বাংলাদেশে ‘অরাজক পরিস্থিতি’ চলছে এবং মানুষের বিভক্তির ফলে যদি অস্থিরতা চলতে থাকে, তবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
সেনাপ্রধানের এ বক্তব্যকে অনেকেই ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি কঠোর সমালোচনা হিসেবে বিবেচনা করছেন। কেউ কেউ একে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত হিসেবেও মনে করছেন।
তবে ড. ইউনূস জানান, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তার ‘খুবই ভালো সম্পর্ক’ রয়েছে এবং সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে তার ওপর কোনো চাপ নেই।