ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গণঅবস্থানকারী ছাত্র-জনতা ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘গ’ শ্রেণীর প্রতীকী ‘শহীদ সেনা দিবস’ এর বদলে ‘ক’ শ্রেণীর ‘জাতীয় শোক দিবস’ ও সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
তারা জানিয়েছেন সরকার জাতীয় শোক দিবস পালন না করলেও ছাত্র-জনতা মঙ্গলবার জাতীয় শোক দিবস পালন করবে। এ উপলক্ষে রাজু ভাস্কর্যে কালোপতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া বিকেল ৩টায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করা হবে। সেখানে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকারী ও জুলাই গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় গণঅবস্থানের সংগঠক ও বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ এক লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানান।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সাংগঠনিক প্রধান মো. শফিউর রহমান, সাকিব আমিন, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সিনিয়র সদস্য সচিব ইশতিয়াক আহমেদ ইফাত, সহকারী সদস্য সচিব হামিম খান শুভ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে আবদুল ওয়াহেদ বলেন, রাত পোহালেই আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে শোকাবহ ২৫ ফেব্রুয়ারি। ২০০৯ সালের এদিনে ভারতীয় হানাদার বাহিনী ও তাদের তাঁবেদার আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় আমাদের জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল। আমাদের সেনা পরিবারের মা ও বোনেরা ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে সেই নির্মমতার কোনো সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি, প্রকৃত গডফাদার, সরাসরি জড়িত বিদেশি ও দেশীয় খুনি এবং তাদের গডফাদারদের বিচার হয়নি। এই বিচার না হওয়ার প্রমাণ ৫৭জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার দায়ে তৎকালীন আওয়ামী রেজিমকে কালেক্টিভরেসপন্সিবিলিটির জন্য বিচারের আওতায় আনা হয়নি। আওয়ামী লীগ দলগতভাবে বিডিআর হত্যায় জড়িত হলেও দলটির বিচার হয়নি। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, সরকারের নানা উপদেষ্টা ও কর্মচারীদের কথায় স্পষ্ট যে তারা হাসিনা রেজিম ও আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে দালালিতে লিপ্ত। তারা সেনাকর্মকর্তাদের হত্যাকারী ও ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় না, তারা দল হিসেবেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় না। বরং তারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে পুনরুজ্জীবিত ও পুনর্বাসিত করতে চায়। এ জন্য তারা বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
২৫ ফেব্রুয়ারির দিবস সম্পর্কে আবদুল ওয়াহেদ অভিযোগ করে বলেন, ষড়যন্ত্র কিভাবে চলছে তার এক সুস্পষ্ট প্রমাণ হলো, ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা ট্র্যাজেডির দিনকে ১৬ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যেখানে ক শ্রেণীর ‘জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে পালন করার কথা সেখানে একে গ শ্রেণীর ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। দুঃখজনক সত্য হলো এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রমূলক কাজটি করানো হয়েছে দুই হাজার শহীদের রক্তে অর্জিত জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, ক শ্রেণীর দিবস সমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপন/পালন করা বিধি রয়েছে। এসব দিবসে সাধারণ তথা সরকারি ছুটি থাকে। ৫ আগস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে ১৮টি দিবসের মধ্যে চারটি দিবসই ছিল হাসিনার বাবা মা ও ভাইয়ের জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালনের জন্য। কথা হলো শেখ হাসিনার ব্যাংক ডাকাত ভাই শেখ কামালের জন্মদিন যেখানে ক শ্রেণীর দিবস হিসেবে পালিত হতো সেখানে ৫৭জন সেনা কর্মকর্তার শাহাদাত বার্ষিকী কেন গ শ্রেণীর দিবস হিসেবে গণ্য হবে?
গ শ্রেণীর দিবসগুলো পালনের বিধান তুলে ধরে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, বিশেষ বিশেষ খাতের প্রতীকী দিবসসমূহ সীমিত কলেবরে পালন করা হবে। মন্ত্রী/উপদেষ্টাবৃন্দ এ সকল দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিতির বিষয় বিবেচনা করবেন। উন্নয়ন খাত হতে এ সকল দিবস পালনের জন্য কোন বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হবে না। এখন প্রশ্ন হলো গ শ্রেণীর দিবস ঘোষণা করে এই বার্তা দেওয়া হলো কি না যে, শহীদ সেনা দিবস সীমিত কলেবরে পালন করা হবে?
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বল তে চাই, বাংলাদেশের জনগণ ২৫ ফেব্রুয়ারি শহীদ সেনা দিবসকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করতে চায়,তারা ২৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি চায়। এ জনআকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে আমরা শহীদ সেনা দিবসকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করব। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে রাজু ভাস্কর্যে শোক দিবসের কালোপতাকা উত্তোলন করা হবে। শহীদ সেনাকর্মকর্তাদের ছবি ও ভিডিও প্রদর্শন করা হবে।
জুলাই গণহত্যা, পিলখানা ও শাপলা হত্যাযজ্ঞে ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ ও দোসর দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিকাল ৩টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে প্রধান উপদেষ্টায় কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে আবদুল ওয়াহেদ এ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।